বুধবার সকাল সাড়ে নটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত প্রায় একঘন্টা দিল্লিতে ৬ নম্বর জনপথ রোডে পাওয়ারের বাড়িতে ছিলেন প্রশান্ত। সূত্রের খবর, গতকাল পাওয়ারের বাড়িতে বিজেপি বিরোধী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট মানুষদের বৈঠক থেকে ঠিক কী উঠে এলো তা জানতেই এদিন পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করেন প্রশান্ত কিশোর। এই বৈঠক নিয়ে দেশজুড়ে চর্চার মূল কারণ প্রশান্ত কিশোর ১০ দিনে এই নিয়ে তিনবার শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করলেন।
advertisement
অনেকেই এর উত্তর খুঁজছেন পিকের কথায়। প্রশান্ত কিশোর সম্প্রতি বলেছেন, তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্ট গড়ে মোদি সরকারের বিরোধিতা করলে ফল মিলবে না। এর পাশাপাশি বিরোধীদের গতিবিধি রীতিমতো মাপছেন প্রশান্ত। রাজনৈতিক মহল বলছে, আসলে পিকে চান, আমনা-সামনা লড়াই অর্থাৎ বহু নেতৃত্ব নয়, মোদি বিরুদ্ধতার মুখ হয়ে উঠুন মমতা-শরদের মতো পোড়খাওয়া, পরীক্ষিত মুখ, তাহলেই সাফল্য আসবে। আর সেই কারণেই তিনি গোটা বিষয়টি সরেজমিনে পরখ করছেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লির জনপথে নিজের বাসভবনে এনসিপি'র প্রধান শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বে কংগ্রেস-বিহীন বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে এক বৈঠক হয়। বিকেল চারটে থেকে শুরু করে প্রায় আড়াই ঘন্টার উপর চলে সেই ম্যারাথন বৈঠক। অনেকেই মনে করছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিজেপিকে উৎখাতের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বৈঠকে এনসিপি, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, সিপিএম, সি পি আই, আর এল ডি-সহ জাভেদ আখতারের মত কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া যশবন্ত সিনহা, সমাজবাদী পার্টির নেতা ঘনশ্যাম তিওয়ারি, রাষ্ট্রীয় লোক দলের জয়ন্ত চৌধুরী, আম আদমি পার্টির সুশীল গুপ্তা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিপিআই এবং সিপিআইএমের নেতারাও। মোট ৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থাকলেও বৈঠকে কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেসের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতোই।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এনসিপি নেতা মজিদ মেমন জানান, "এই বৈঠক শারদ পাওয়ারের বাড়িতে হলেও এই বৈঠক তিনি ডাকেননি। বৈঠক হয়েছে রাষ্ট্রমঞ্চের ডাকে। এটি কোন বিজেপি বিরোধী মঞ্চের বৈঠক নয়। বৈঠকে আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে. রাজনৈতিক বিষয় গৌণ ছিল। বিশেষত সমমনস্ক রাজনৈতিক নেতাদের এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এই বৈঠক ডাকা হয়নি। কংগ্রেসের ৫ নেতাকে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের দলের কোনও সমস্যা থাকায় তারা উপস্থিত হতে পারেননি।" রাজনৈতিক মহলের ব্যখ্যা, আসলে পাওয়ার সকলের মন পড়ছেন এই কথাবার্তাতেই। আর তাঁর থেকে গোটা বিষয়টা বুঝে নিচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর।
গত সোমবারও প্রশান্ত কিশোর টানা কয়েক ঘণ্টার বৈঠক করেছেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের সঙ্গে। আর তারপর আজ এই বৈঠক। অ-কংগ্রেসি ও বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে। আর সেটাই এক অন্য রাজনৈতিক সমীকরণ এর দিকে ইঙ্গিত বলেই সবাই মনে করছেন।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মোদি বিরোধীদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ মডেলকেই তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি কোনোও ফ্রন্ট না গড়ে "একের বিরুদ্ধে এক" লড়াইকে তুলে ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ, ১:১ লড়াই, যা হবে রাজ্য ভিত্তিক। আর এ ক্ষেত্রে মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাদের মতো লড়বেন প্রশান্ত কিশোর।