অমৃতসরের জোড়া ফটকের কাছে ধোবি ঘাট ময়দানে রাতে বড়সড় মেলা বসেছিল। হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল রাবণ দহনের দৃশ্য দেখতে। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, নারী—সকলেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ময়দান ও পাশের রেললাইনের উপর।
ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন? সবচেয়ে ‘সস্তায়’ কী ভাবে MBBS হবেন? দেশে না বিদেশে? জানুন ‘সহজ’ উপায়!
advertisement
সন্ধ্যা প্রায় ৭টার সময় রাবণের পুতুলে আগুন দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে আকাশ ভরে যায় রঙিন আতসবাজিতে—স্কাইশট, রঙিন আলো, তীব্র শব্দে পুরো এলাকা গমগম করতে থাকে। মানুষ এতটাই মগ্ন ছিল উৎসবের রঙে যে কেউ খেয়ালই করেনি, পাশের রেললাইনে একটা ট্রেন দ্রুত এগিয়ে আসছে।
সেই সময় জালন্ধর থেকে অমৃতসরগামী ডিএমইউ প্যাসেঞ্জার ট্রেন (নম্বর ৫৪৬০১) এগিয়ে আসছিল জোড়া ফটকের দিকে। ট্রেনের গতি ছিল প্রায় ৮২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। সিগন্যাল ছিল সবুজ, তাই চালক ট্রেন থামানোর কারণ দেখেননি। কিন্তু সামনে ছিল একটা বাঁক—যার ফলে রেললাইনের ওপরে দাঁড়ানো বিশাল ভিড় তাঁর চোখে পড়েনি।
বাঁক ঘুরেই তিনি দেখেন মাত্র ২৫০ মিটার দূরে মানুষের সাগর! আতঙ্কে তিনি বারবার হর্ণ বাজাতে থাকেন, কিন্তু আতসবাজির গর্জনে সেই শব্দ কেউ শোনেনি। আলোয় ঢাকা পড়ে যায় ইঞ্জিনের হেডলাইটও। হঠাৎ জরুরি ব্রেক করলে ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারত, তাই তিনি ধীরে ধীরে ব্রেক চাপতে থাকেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ট্রেন থামার আগেই শতাধিক মানুষ তার তলায় পিষ্ট হয়ে পড়ে।
এক মুহূর্তেই উৎসব মাটি। রঙিন আলোর নীচে রক্তে রাঙা রেললাইন। শিশুর কান্না, আহতদের আর্তনাদ, মোবাইল টর্চের আলোয় স্বজন খুঁজে বেড়াচ্ছে মানুষ। চারিদিকে শুধুই বিশৃঙ্খলা।
প্রাথমিক হিসাবে ৬১ জন মারা যান, আর ২০০-রও বেশি মানুষ আহত হন। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে একই সময়ে আরেকটি ট্রেন — অমৃতসর-হাওড়া মেল (নম্বর ১৩০০৫) — ঘটনাস্থল অতিক্রম করার সময় কয়েকজন আহত ব্যক্তির ওপর দিয়েও চলে যায় বলে জানা যায়। ফলে আরও প্রাণহানি ঘটে।
পরে তদন্তে জানা যায়, যে দশেরা কমিটি (ইস্ট) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল, তারা কোনো সরকারি অনুমতি নেয়নি। অনুষ্ঠানস্থলটি ছিল রেললাইনের একেবারে পাশে, অথচ কোনও ব্যারিকেডও ছিল না।
রেল সুরক্ষা কমিশনার (CCRS) রিপোর্টে এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়— “অবহেলা ও অবৈধভাবে রেললাইনে প্রবেশ।”
জালন্ধর ডিভিশনের কমিশনার-এর নেতৃত্বে হওয়া ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তেও একই কথা উঠে আসে—
দোষী আয়োজক কমিটি, রেলওয়ে কর্মীরা এবং স্থানীয় প্রশাসন—সব পক্ষই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। গেটকিপারও রেললাইনে জনসমাগমের খবর উপরের কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
উৎসবের রাতে যে শিক্ষা রয়ে গেল
অমৃতসরের সেই দুর্ঘটনা শুধু কয়েক ডজন প্রাণ কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছিল হাসির শহরটার আনন্দও। যে উৎসব একতার প্রতীক, তা পরিণত হয়েছিল অবহেলার প্রতীকে।
দশেরা, আলো আর আনন্দের উৎসব, সেই বছর অমৃতসরে লিখেছিল এক ভয়াবহ ইতিহাস — যেখানে উৎসবের শব্দ ঢেকে দিয়েছিল সতর্কতার আওয়াজ, আর আনন্দের জায়গা দখল করেছিল শোকের নিস্তব্ধতা।
এই বিভীষিকাময় ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর, পঞ্জাবের অমৃতসরে, দুর্গাপূজার সময় দশেরা উৎসবের রাতে।