কিন্তু, হঠাৎ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ইতিহাসের কাছে কেন ফিরে যেতে হল আজ? কারণ, পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন হলুদ ধোঁয়া উড়িয়ে, সাংসদদের বেঞ্চের উপরে ঝাঁপ দিয়ে হুলস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন যে ৪ জন, তাঁরা প্রত্যেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ভগৎ সিং ফ্যানক্লাবের’ সদস্য৷
এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, ‘ভগৎ সিং’-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই নীলমরা স্থির করেছিলেন, নিজেদের দাবিদাওয়া, মতামত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে ভগৎ সিং-এর পদ্ধতি-ই অবলম্বন করবেন তাঁরা৷ ঠিক যেভাবে, সংসদে বোমা ফেলে, প্রায় স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে নিজেদের কথা জানাতে চেয়েছিলেন ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্তেরা, ঠিক সেই ভাবে৷ এদিন, নীলমদের হলুদ রঙ বেছে নেওয়ার পিছনেও সেই ভগৎ সিং-ই রয়েছেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ৷ কারণ, ‘কেশরী’ স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং-এর প্রিয় রঙ হিসাবে কথিত৷
advertisement
‘সংসদ হামলার’ ২২তম বর্ষপূর্তির দিন ১৩ ডিসেম্বর, সংসদের ভিতরে এবং বাইরে যে চার জন হলুদ ও লাল ধোঁয়া ছড়িয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ তাঁদের সঙ্গে আরও ২ জন জড়িত রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে৷ পরে ধরা পড়ে আরও এক৷ সংসদের ভিতর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন সাগর শর্মা এবং ৩৫ বছরের ডি মনোরঞ্জন৷ সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছেন বছর ৪২-এর নীলম সিং ওরফে নীলম আজাদ এবং ২৫ বছরের তরুণ অমল শিণ্ডে৷ বাকি দুই অধরা অভিযুক্তের নাম বিক্রম এবং ললিত৷
নীলম হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা। অমল মহারাষ্ট্রের লাতুরের। সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি কর্ণাটকের৷ তবে দু’জনে আলাদা শহরের থাকেন। বিক্রমের বাড়ি গুরুগ্রামে৷ সূত্রের খবর, এদিনের ঘটনার আগে বিক্রমের গুরুগ্রামের বাড়িতেই ছিলেন এই ৬ জন৷ সেখানেই এই গোটা ঘটনার ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়৷ পুলিশ জানাচ্ছে, এই ৬ জনই সোশ্যাল মিডিয়া গ্র্রুপ ‘ভগৎ সিং ফ্যানক্লাবের সদস্য’৷ গত ৪ বছর ধরে এঁদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে৷ গত ৩ মাস ধরে এঁরা এই পার্লামেন্টে ‘স্মোক অ্যাটাকে’র পরিকল্পনা করছিল৷ এমনকি, বুধবারের ঘটনার আগেও পার্লামেন্টে রেকি করে গিয়েছিল তারা৷
জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে থাকা নীলম সিং ওরফে নীলম আজাদ নামের ওই মহিলা অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত৷ তাঁর এমএ, বিএড, এমফিল ডিগ্রি রয়েছে৷ নেট-ও পাশ করা৷ তা সত্ত্বেও ৪২ বছরে দাঁড়িয়েও তিনি বেকার৷ কর্মহীন তরুণী৷ এর আগে কৃষক আন্দোলনে, কুস্তিগীরদের বিক্ষোভস্থলেও যোগ দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে৷ তেমনটাই দাবি পুলিশের৷ শুধু তাই নয়, নীলমের পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, সে ভগৎ সিং এবং বি আর অম্বেদকরের অনুরাগী৷ মাঝেমধ্যেই ছোটদের মধ্যে ভগৎ সিংয়ের বই বিতরণ করতেও দেখা যায় তাঁকে৷
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে এই বিষয়ের যোগ থাকতে পারে৷ কিন্তু, ধৃতদের অনেকের মোবাইল ফোন উদ্ধার না হওয়ায় অনেক কিছুই অজানা থেকে গিয়েছে৷
যদিও, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য, এই নীলমকে ‘আন্দোলনজীবী’ বলে কটাক্ষ করেছেন তাঁর নিজের পোস্টে৷ নীলমকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমর্থক হিসাবেও দাবি করেছেন তিনি৷