এক নজরে দেখে নেওয়া যাওয়া যাক কিভাবে বদলে যেতে চলেছে দেশের ভবিষ্যতের শিক্ষা ব্যবস্থা-
১) ৩৪ বছর পর নয়া শিক্ষানীতি ৷ এই নয়া শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক ‘গুরুত্বহীন’ ৷ একাদশ-দ্বাদশে কোনও স্ট্রিম থাকছে না ৷ নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে কার্যত গুরুত্বহীন মাধ্যমিক। অন্যদিকে ধারে-ভারে গুরুত্ব বাড়ছে উচ্চ-মাধ্যমিকের।
২) ১৫ বছরের স্কুলশিক্ষাকে ভাগ করা হয়েছে ৫+৩+৩+৪ ভাগে ৷ ১২ বছর স্কুলের পঠনপাঠন ৷ ৩ বছরের প্রাইমারি - অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষা ৷ এখানে প্রাথমিককেও আনা হচ্ছে স্কুলের আওতায়। ক্লাস ওয়ান ও ক্লাস টু-কে রাখা হচ্ছে প্রি-প্রাইমারির মধ্যে। সূত্রের খবর, ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ - আটটি সেমেস্টারে পড়াশোনা চলবে। ৪ বছরের মধ্যে ৪০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
advertisement
৩) নয়া নীতিতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে স্কুলেই ভোকেশনাল শিক্ষায়৷ এই নয়া শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ছাত্রদের মধ্যে স্কুল জীবন থেকেই অঙ্ক ও বিজ্ঞান ভাবনা বাড়াতে ভোকেশনাল শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে৷ ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস ৬ থেকেই কোডিং শিখবে৷
৪) নয়া শিক্ষানীতির অন্যতম পরিবর্তন হল আঞ্চলিক মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে আঞ্চলিক মাতৃভাষাকেই সামনের সারিতে রাখা। নতুন শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, কমপক্ষে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা বা শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসাবে আঞ্চলিক বা স্থানীয় মাতৃভাষাকে মাধ্যম করতে হবে। সেটা যদি অষ্টম শ্রেণি বা তার বেশি করা যায়, তাহলে আরও ভাল হয়। সমস্ত স্কুল স্তর ও উচ্চশিক্ষায় সংস্কৃত পড়ার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। এখানে মানা হবে তিনটি ভাষার নীতি। অর্থাৎ তিনটি ভাষা পড়ানো হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছে শিক্ষামহল।
৫) নয়া ব্যবস্থায় ‘গুরুত্বহীন’ মাধ্যমিক ৷ একাদশ-দ্বাদশে কোনও স্ট্রিম থাকবে না ৷ উচ্চমাধ্যমিকে কলা ও বিজ্ঞান তফাৎ থাকছে না ৷ বিষয় বাছাইয়ে বাধ্যবাধকতাও থাকছে না ৷ অর্থাৎ কেউ পদার্থবিদ্যার সঙ্গে চাইলে সঙ্গীত নিয়েও পড়তে পারেন। আবার রসায়ন আর ইতিহাসও একসঙ্গে পড়া যাবে।
৬) নয়া শিক্ষা নীতিতে স্কুল শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষাতেও বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে ৷ এবার থেকে স্নাতক অনার্স কোর্স তিন বছরের নয়, চার বছরের ৷ স্নাতকোত্তরে ১ বা দুবছরের কোর্স পড়ানো হবে ৷ এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একসঙ্গে পড়ার জন্য ৫ বছরের একটি ইন্টিগ্রেটেড কোর্সেরও ব্যবস্থা রয়েছে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে ৷
৭) উচ্চশিক্ষায় একটিই নিয়ামক সংস্থা ৷ কলেজে একাধিক এন্ট্রি-এগজিট পদ্ধতি ৷ পুরো কোর্স শেষ না হলেও স্বীকৃতি ৷
প্রথম বছর শেষ করলে সার্টিফিকেট ৷ দ্বিতীয় বছর শেষ করতে পারলে ডিপ্লোমা ৷ পুরো কোর্স শেষ করলে ডিগ্রি ৷ পছন্দমতো বিষয় বেছে নিতে পারবেন পড়ুয়ারা ৷ কলেজে বিষয়ের ওপর গবেষণার সুযোগ ৷ গবেষণাপত্র গৃহীত হলে আলাদা সার্টিফিকেট ৷
৮) উচ্চশিক্ষায় উদ্ভাবন ও গবেষণায় জোর দিয়ে একগুচ্ছ নীতি বদলের ঘোষণা। উচ্চশিক্ষার নীতি নির্ধারণে থাকবে একটিই সংস্থা ৷ প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট ৷ উচ্চশিক্ষার কোর্সে ভর্তিতে কমন এনট্রান্স টেস্ট ৷ তৈরি হবে ন্যাশনাল টেস্ট এজেন্সি ৷ এমফিল উঠে যাচ্ছে, থাকছে শুধু পিএইচডি ৷
৯) আইআইটির প্রতিষ্ঠানকে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে জোর ৷ উচ্চশিক্ষায় নাট্যশাস্ত্র, খেলার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে ৷ এছাড়া কলেজগুলিকেও ফিনান্সিয়ালি আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হবে ৷ গোটা দেশে যে ৪৫ হাজার কলেজ রয়েছে তাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ এনরোলমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে কেন্দ্র ৷ কলেজগুলিকে গ্রেডের উপর ভিত্তি করে স্বশাসন দেওয়া হবে ৷ল' এবং মেডিক্যাল ছাড়া বাকি সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাতার তলায় আসতে চলেছে।
১০) ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারে নয়া শিক্ষানীতি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি৷ দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই একেবারে আমূল সংস্কার করা হয়েছে নয়া নীতিতে৷ দেশের মোট জিডিপি-র ৬ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে শিক্ষাখাতে৷ যা এতদিন ছিল ৪.৪৩ শতাংশ ৷