পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামী সৌরভকে অচৈতন্য করতে বিপুল পরিমাণে ঘুমের ওষুধ এবং মাদকদ্রব্য ব্যবহার করেছিল মুসকান৷ এখন প্রশ্ন, সেই ঘুমের ওষুধ কোথা থেকে পেয়েছিল সে? তদন্তে জানা গিয়েছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শারদা রোডের এক ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজেকে ডিপ্রেশনের রোগী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল মুসকান এবং ঘুমের ওষুধ লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল৷ তারপর সেই প্রেসক্রিপশান নিয়েই বিভিন্ন দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ কেনে সে ও সাহিল৷
advertisement
মুসকান গুগলে সার্চ করে ঘুমের ওষুধ ও মাদকের নির্দিষ্ট রাসায়নিক উপাদান (সল্ট) খুঁজে বের করে৷ তারপর সে তার প্রেমিক সাহিলের সঙ্গে খৈরনগর যায় এবং সেখান থেকে ঘুমের ওষুধ ও মাদকের ওষুধ কিনে আনে।
শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশনেই খুনের পরিকল্পনা থেমে ছিল না৷ খুনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সে অনলাইনে রিসার্চ করেছিল৷ তদন্তে জানা গিয়েছে যে, গুগলে ঘুম ও মাদকদ্রব্যের প্রভাব, তাদের রাসায়নিক উপাদান ও সেগুলি কী ভাবে পাওয়ার যায়, তা নিয়ে সার্চ করেছিল মুসকান৷
এছাড়াও, কিছু ওষুধের তথ্য অনলাইনে সংগ্রহ করেছিল মুসকান৷ যদিও এখনও পরিষ্কার নয় যে, ওষুধগুলো মুসকান দোকান থেকে কিনেছিল নাকি অনলাইনে আনিয়েছিল৷ পুলিশ এখন এই দিকটিও তদন্ত করছে যে, সে কোনও ডেলিভারি অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছিল কি না।
এছাড়াও, জানা গিয়েছে, মুসকান শারদা রোড থেকে ৮০০ টাকায় দুটি মাংস কাটার ছুরি, ৩০০ টাকায় খুর ও পলিথিন ব্যাগ কিনেছিল। এগুলো সম্ভবত স্থানীয় দোকান থেকে কেনা হলেও, অনলাইনে এগুলোর দাম ও কোথায় সেগুলি পাওয়া যায় তা ইন্টারনেটে সার্চ করেছিল৷
গত ৩ মার্চ, সৌরভ তাঁর মা রেণু-র বাড়ি থেকে লাউয়ের কোফতা (লাউ দিয়ে তৈরি একটি খাবার) নিয়ে এসেছিল। মুসকান সেই কোফতায় ঘুমের ওষুধ ও মাদক মিশিয়ে দেয়। এর আগে, সে সৌরভের মদের বোতলে ঘুমের ওষুধ মেশানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সৌরভ সেদিন মদ খাননি৷ কোফতার মধ্যে ওষুধ মেশানোর পরে সেই তরকারি খেয়ে সৌরভ অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর, মুসকান ও সাহিল মিলে খুর দিয়ে তাঁর গলা কেটে খুন করে ও দেহ টুকরো টুকরো করে সিমেন্টের ড্রামে ভরে দেয়৷
এসপি সিটি আয়ুষ বিক্রম সিংহ জানিয়েছেন, মুসকান ও সাহিল ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকেই সৌরভকে খুনের পরিকল্পনা করছিল। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন এবং অনলাইন সার্চ এই ষড়যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
পুলিশ এখন তদন্ত করছে যে,প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ ছাড়াও আর কী কী অনলাইনে অর্ডার করা হয়েছিল। ফরেনসিক টিম ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করছে যাতে এ সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার যায়৷
জানা গিয়েছে, মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল মুসকান৷ তাঁর স্বামী সৌরভ তাঁকে মাদক সেবনে বাধা দিত, সেই কারণেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে মুসকানের বিরুদ্ধে৷