জাকির নায়েক ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের জন্য পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ঘৃণা ছড়ানো এবং তরুণদের চরমপন্থায় উস্কে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি মালয়েশিয়ায় পৌঁছান, যেখানে তাঁকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। ভারত ২০১৮ সাল থেকে তাঁকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু মামলাটি মালয়েশিয়ার আদালতে আটকে আছে। হাই কমিশনার মুজাফফর শাহ বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। জাকির নায়েকের মামলা মালয়েশিয়ার একটি আদালতে চলছে এবং বিচার প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
advertisement
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে ভারত সরকার যে প্রমাণ বা কারণ প্রদান করবে, তার ভিত্তিতেই বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এই বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সরাসরি কোনও যোগ নেই। ২০২৪ সালের অগাস্টে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ভারত সফরের পর এই বিবৃতি এসেছে। তিনি তখন বলেছিলেন যে ভারত যদি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সরবরাহ করে, তাহলে প্রত্যর্পণ বিবেচনা করা হবে। হাইকমিশনারের বক্তব্য এখন সেই দিকেই ইতিবাচক সঙ্কেত পাঠায়।
জাকির নায়েকের মামলা দীর্ঘদিন ধরে ভারত-মালয়েশিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি অস্বস্তি হয়ে রয়েছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একটি চার্জশিট দাখিল করে, অভিযোগ করে যে তাঁর বক্তৃতা ২০১৬ সালে বাংলাদেশে হামলার অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিল। এনআইএ চরমপন্থা উস্কে দেওয়া, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়া এবং অর্থ পাচারের মামলা দায়ের করে। ভারত ইন্টারপোলের কাছ থেকে রেড কর্নার নোটিসও চেয়েছিল, কিন্তু প্রমাণ অপর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হওয়ায় তিনবার ব্যর্থ হয়েছিল।
মালয়েশিয়া নায়েককে আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু ভারতের দাবি পুরোপুরি উপেক্ষা করেনি। ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মহম্মদ বলেছিলেন যে মালয়েশিয়ার প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রয়েছে। তবে, আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার ২০২৪ সালের অগাস্টে বলে, ‘‘ভারত যদি প্রমাণ না দেয়, আমরা দ্বিধা করব না।’’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে আইনি সহায়তা চুক্তির (এমএলএটি) অধীনে প্রক্রিয়াটি চলছে। এনআইএ এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মালয়েশিয়ায় বেশ কয়েকটি নথি পাঠিয়েছে। ২০১৯ সালে ইডি মুম্বই আদালত থেকে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা চায়। এর পর ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হয়, কিন্তু মালয়েশিয়া বলেছে যে বিষয়টি বিচারাধীন।