প্রথম দিকে কোঝিকোড় এবং মল্লপুরমের মতো দুটি জেলা থেকেই এই মারণ জীবাণুর সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছিল৷ কিন্তু ধীরে ধীরে তা গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ আক্রান্তদের মধ্যে ৩ মাসের শিশু থেকে ৯১ বছরের প্রবীণও রয়েছেন৷
স্বভাবতই কেরলে এই সংক্রমণের দাপট বৃদ্ধির পরেই মানুষের মনে সবথেকে বড় প্রশ্ন কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে এই মারণ জীবাণু? তার থেকে বাঁচার উপায়ই বা কী?
advertisement
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পুকুর, জলাশয়, জলাধার অথবা অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলের স্বচ্ছ জলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ন্যাগলেরিয়া ফোলারি নামে এই জলজ জীবাণু৷ তবে সত্যি সত্যিই তা মানুষের মস্তিষ্ক বা ব্রেনকে খেয়ে নেয় না৷ নাক দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশের পর অলফ্যাক্টরি নার্ভ দিয়ে মানুষের মস্তিষ্কে পৌঁছয় এই জীবাণু৷ যার জেরে প্রাইমারি অ্যামোবিক মেনিনগোএনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয় মানুষের মস্তিষ্ক৷ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই সংক্রমণে মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হতে শুরু করে৷ এই সংক্রমণে আক্রান্তদের মধ্যে গোটা বিশ্বেই মৃত্যু হার অত্যন্ত বেশি৷
তবে এই জীবাণু কোনওভাবেই পানীয় জলের মধ্যে দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে না৷ বরং দূষিত জলের মধ্যে মিশে মানুষের নাক দিয়ে তা শরীরে প্রবেশ করে৷ সেখান থেকেই মস্তিষ্কে পৌঁছনোর পথ পেয়ে যায় এই জীবাণু৷
কেরলের উষ্ণ আবহাওয়া এই ধরনের জীবাণুর বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ৷ জলাশয়, পুকুর, হ্রদের উষ্ণ জলে এই জীবাণুর বাড়বাড়ন্ত সবথেকে দ্রুত ঘটে৷ কেরলে বর্ষার বৃষ্টিতে পুকুর, জলাশয়গুলি ভরে যায়৷ আবার কয়েকদিন বৃষ্টি না হলেই সেই জল দূষিত হতে শুরু করে৷ কেরলের বহু জায়গাতেই এখনও নদী, পুকুর, কুয়োর জলে নিয়মিত স্নান করেন মানুষ৷ যা এই জীবাণুর সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে৷
একবার শরীরে এই জীবাণু প্রবেশ করলে ২-৩ দিনের মধ্যে উপসর্গ ফুটে ওঠে৷ এর পর দ্রুত রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে৷ এই রোগ নির্ণয় করতে করতেই বহু ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যায়৷
প্রাথমিক পর্যায়ে এই সংক্রমণে আক্রান্ত হলে জ্বর, বমি, মাথাব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা যায়৷ পরের ধাপে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, আলোয় সমস্যা, বিভ্রান্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয়৷ অবস্থার আরও অবনতি হলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন৷ আক্রান্ত হওয়ার সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে মৃত্যুও হয়৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬২ এবং ২০২১ সালে ১৫৪ জন এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তাদের মধ্যে মাত্র চার জন বেঁচেছিলেন৷ পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, লাতিন আমেরিকাতেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে৷ ভারতে অতীতে এই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঘটনা থাকলেও কেরলে এবারের পরিস্থিতিই সবথেকে খারাপ৷