পুলওয়ামায় আদিল আহমেদ দার যেখানে থাকতেন, সেখান থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সম্বুরায় বাস নাজিমের। বলা ভাল যে, দারের গ্রাম কাকাপোরার গুন্ডিবাগের একেবারে পাশেই সম্বুরা গ্রাম। আর এই দুই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে ঝিলম নদী। অথচ পাশাপাশি দুই গ্রামের দুই যুবকের কাহিনি সম্পূর্ণ আলাদা।
আসলে কাকাপোরার আদিল আহমেদ দার সন্ত্রাসবাদের পথ অবলম্বন করেছিল। অথচ দারের পড়শি গ্রামেরই বাসিন্দা নাজিম তাঁর ভাল কাজের জন্য সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন। শ্রীনগরের বক্সী স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর সভায় গিয়ে বৃহস্পতিবার নিজের সেই কাজের গল্পই শোনালেন নাজিম। আর তাঁর সেই গল্পই সকলকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, নাজিমের কাজে মুগ্ধ হলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই যুবকের অনুরোধে তাঁর সঙ্গে সেলফিও তুললেন। আর তা পোস্টও করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিমেষের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ছবির ক্যাপশনে নাজিমকে নিজের ‘বন্ধু’ বলেও আখ্যা দেন মোদি। এ-ও জানান যে, ওই যুবকের ভাল কাজে তিনি আপ্লুত!
advertisement
আরও পড়ুন: ভারতের সবচেয়ে বড় পার্ক আছে কলকাতাতেই! গিয়েছেন কখনও? মুগ্ধ হবেনই, ১০০% গ্যারান্টি
নাজিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানান যে, তাঁর এই সফরটা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেই সময় দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। নিজের বাড়ির ছাদে রেখেছিলেন মৌমাছির দুটি বাক্স। নাজিম বলে চলেন, “ইন্টারনেটে রীতিমতো পড়াশোনা করি এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিই। সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তখন ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে আমায় ২৫টি মৌমাছির বাক্স দেয় সরকার। প্রথমবারের জন্য তা থেকে ৭৫ কেজি মধু বার করি। আমি সেই মধু বোতলে ভরে গ্রামে বিক্রি করতাম। তা থেকে ৬০০০০ টাকা রোজগার হয়। এরপর উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে ৫ লক্ষ টাকার প্রাইম মিনিস্টারস এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (পিএমইজিপি)-এর সহায়তা নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করি। মৌমাছির বাক্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০টি। এরপর ২০২০ সালে আমি ওয়েবসাইট খুলি। আমার পণ্যের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করি। অনলাইনে কয়েক হাজার কিলো মধু বিকোয়। বর্তমানে আমার কাছে ২০০০টি মৌমাছির বাক্স রয়েছে। অন্যদেরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। আর আমার ব্যবসায় ১০০ জন স্থানীয় যুবক যোগ দিয়েছেন। ২০২৩ সালে আমি একটি এফপিও পাই। আর আমরা সম্প্রসারণের জন্য মার্কেটিং লিঙ্কেজ তৈরি করেছি।”
আরও পড়ুন: ১২ মার্চ বড় কোনও চমক দেবেন মমতা? তুমুল শোরগোল! কী এমন হতে পারে?
ওই যুবক আরও বলেন যে, অন্য অভিভাবকদের মতো তাঁর মা-বাবাও চেয়েছিলেন তিনি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবেন। অথচ নাজিম নিজের মনের কথাই শুনেছেন। যুবকের সাফল্যের এই কাহিনি শুনে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন যে, “কাশ্মীরে ‘মিষ্টি বিপ্লব’ এনেছেন নাজিম।”
একজন ছাত্র হিসেবে নাজিমের এহেন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পাশাপাশি তাঁর মা-বাবা যেভাবে তাঁকে মানুষ করেছেন, সেই বিষয়টারও প্রশংসা করেন তিনি। নাজিমের উদ্দেশ্যে মোদি বলেন, “দেশের যুব সম্প্রদায়কে এক নতুন দিশা দিচ্ছেন আপনি। আর আপনার মতো যুবকরা আমাদের শক্তি।”
নাজিম জানান, ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ছবির সঙ্গে সেলফি তুলেছিলেন তিনি। বরাবরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সামনাসামনি সেলফি তোলার স্বপ্নও দেখতেন। ফলে যুবকের এই ইচ্ছার কথা শোনার পর তা অপূর্ণ রাখেননি মোদি। সেলফি তোলেন নাজিমের সঙ্গে। এমনকী সেই ছবি বৃহস্পতিবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তিনি। যা সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন্ডিং হয়ে গিয়েছে। ওই ছবির ক্যাপশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন যে, “আমার বন্ধু নাজিমের সঙ্গে একটি স্মরণীয় সেলফি। তিনি যে ভাল কাজ করছেন, তা দেখে আমি সত্যিই আপ্লুত। ওই জনসভায় একটি সেলফি তোলার জন্য অনুরোধ জানান। আর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে আমিও খুবই খুশি। তাঁর ভবিষ্যৎ প্রয়াসের জন্য আমার তরফ থেকে রইল অনেক শুভকামনা।”