আদালত, সুপ্রিম কোর্টের ২০১৮ সালের নূপুর তালওয়ার বনাম উত্তরপ্রদেশ সরকারের মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে জানিয়েছে যে, সরাসরি প্রমাণ থাকলে মোটিভ প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়, কাজলের ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ তার বাড়ির উঠোনে পুঁতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে ১৫টি গুরুতর আঘাত ছিল, যার মধ্যে একাধিক হাড় ভাঙা এবং গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়।
advertisement
২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরপ্রদেশের বরেলি জেলায় ১০ বছর বয়সী এক মেয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে কেঁপে ওঠে। ইজ্জতনগর এলাকায় কাজলকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তার সৎমা ঋতু শর্মা। তাকে সঙ্গ দিয়েছিল তার বাবা রবি বাবু শর্মা ও কাকিমা রাধা দেবী।
আরও পড়ুন: বার্ড ফ্লুর দাপটে দ্রুত কমছে চিকেনের দাম! সুযোগ বুঝে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাটন, মাছ, কোথায় জানুন…
বরেলি পুলিশের মতে, ২২ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে বাড়ির কাজের পর বিশ্রাম নিচ্ছিল কাজল। তখন তার সৎমা তাকে মুখে লাথি মারে, কারণ সে নাকি কাজ ঠিকমতো শেষ করেনি। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়, যা দ্রুত তীব্র হয়ে ওঠে। রাগের মাথায় ঋতু ধারালো ছুরি নিয়ে কাজলকে ১৫ বারেরও বেশি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায়, কাজলের শরীরে গভীর ক্ষত ছিল, যা হত্যার নিষ্ঠুরতা স্পষ্ট করে।
পুলিশ জানায়, কাজলকে হত্যার পর ঋতু, রবি এবং রাধা তার মৃতদেহ বাড়ির উঠোনে পুঁতে ফেলে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। প্রতিবেশীরা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে কাজলকে নিয়মিত নির্যাতন করা হত। একদিন হঠাৎ সে নিখোঁজ হয়ে গেলে সন্দেহ আরও বাড়ে। এলাকাবাসী পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান।
পুলিশ তদন্ত শুরু করার পর কড়া জেরার মুখে রবি ও ঋতু অপরাধ স্বীকার করে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ২৩ আগস্ট কাজলের দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে দেখা যায়, তার শরীরে একাধিক হাড় ভাঙা ছিল, পেটে গুরুতর আঘাতের কারণে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছিল এবং তার গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়।
তদন্তে পুলিশ খুনের অস্ত্র, একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করে এবং হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। মামলার শুনানিতে আদালত জানায়, “ভিকটিমের উপর চালানো নির্মম অত্যাচার কোনওভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।”
রাধা দেবীর ছেলের সাক্ষ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি উকিল সাচিন জয়সওয়াল বলেন, “রাধা দেবীর ছেলে শুধুমাত্র অপরাধের কথা জানায়নি, সে নিজে খুনের সময়কার বিবরণ দিয়েছে এবং লাশ পুঁতে রাখার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল।”
ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, কাজলের শরীরে ১৫টি আঘাত ছিল, যার মধ্যে একাধিক হাড় ভাঙার চিহ্ন ও গলা কাটার দাগ ছিল। হত্যার জন্য ব্যবহৃত ছুরিটি অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণে সাহায্য করে। সব তথ্য ও প্রমাণ বিচার করে আদালত রবি বাবু শর্মা, ঋতু শর্মা ও রাধা দেবীকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) ও ২০১ (প্রমাণ লোপাট) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩০,০০০ টাকা জরিমানা করে।
