দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে গুজরাতের ক্ষমতায় বিজেপি। কিন্তু, নির্বাচনী ময়দানে এবার তা কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের ঢক্কানিনাদের আড়ালে চাপা পড়ে থাকা গ্রামীণ গুজরাতের উন্নয়নই এবারের ভোটের ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। সেইসঙ্গে জোরদার হয় পতিদার ও প্যাটেলদের সংরক্ষণের আন্দোলনও। সব ফ্যাক্টরকে একসূত্রে গেঁথে বিজেপি বিরোধিতায় নামেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি। আর তাতেই বাজিমাত ৷ বদগাম ও রাধোনপুর থেকে জিতে কংগ্রেসের মুখ রক্ষা করল জিগ্নেস মেবানি ও অল্পেশ ঠাকুর ৷
advertisement
দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে গুজরাতে বহুদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে আসছেন জিগ্নেশ ৷ তপশিলী জাতির জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র বদগাম থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী জিগ্নেশ মেবানি ৷ জিগ্নেশের জনপ্রিয়তার কাছে ম্লান পদ্ম ৷ বিজেপি প্রার্থী বিজয় চক্রবর্তীকে হারিয়ে ১৮,১৫০ ভোটে জিতলেন ৩৬ বছর বয়সী জনপ্রিয় এই দলিত নেতা ৷
অন্যদিকে, তুখোড় প্রচারে ও জনপ্রিয়তায় নিজের কেন্দ্রে বিজেপিকে ধূলিসাৎ করেছেন কংগ্রেস নেতা অল্পেশ ঠাকুর ৷ গুজরাতের অন্যতম বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী কেন্দ্রে রাধোনপুর থেকে জয় ছিনিয়ে নিলেন বছর ৪০-এর তরুণ তুর্কী অল্পেশ ঠাকুর ৷ তাঁর বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন, বিজেপি প্রার্থী লাভিনঞ্জি ঠাকুর ৷ অতীতে লাভিনজী কংগ্রেসের আসনে লড়ে জয় পেলেও পরে তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন ৷
শুধু ভোটের ময়দানেই নয়, নির্বাচনী প্রচারে মোদির মাশরুম খাওয়ার বিপুল খরচের ধুয়ো তুলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন অল্পেশ ৷ এই ওবিসি নেতা প্রধানমন্ত্রী মোদীর খাদ্যাভ্যাসের দিকে আঙুল তুলে অভিযোগ করেছিল, ‘অনেকদিন ধরেই ভাবছি যে মোদির গায়ের রঙ হঠাৎ এত ফর্সা হল কী করে ? প্রধানমন্ত্রীর গায়ের রং আগে আমার মত ছিল ৷ কিন্তু এখন প্রতিদিন তাইওয়ান থেকে আনা মাশরুম খান তিনি ৷’ অল্পেশ ঠাকুরের দাবি ছিল, এক একটি মাশরুমের দাম নাকি ৮০ হাজার টাকা। প্রত্যেক দিন মোদি পাঁচটি করে এই মাশরুম খান ৷ ভোটপ্রচারের ময়দানে শোরগোল পড়ে যায় অল্পেশের এই বক্তব্যে ৷
গেরুয়াশিবিরের নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে কংগ্রেসের উত্থান। গতবার ১৮২টি আসনের মধ্যে ১১৫টি আসন শেষ পর্যন্ত পায় বিজেপি। কংগ্রেসের হাতে ছিল ৬১ আসন। কিন্তু এবার সেই হিসেব উল্টে দিয়েছে হাতশিবির। রাহুলের মাষ্টার স্ট্রোকে জিগ্নেশ, অল্পেশ ও হার্দিক ম্যাজিকেই গুজরাতে খানিকটা হলেও ধাক্কা খেল বিজেপি ৷ তাই গুজরাতে ষষ্ঠবার বিজেপি সরকার গড়লেও রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের ফলাফল ও এই তরুণ সেনাপতিদের জয় নতুন করে অক্সিজেন যোগাল হাত শিবিরে ৷ নিজের ক্যারিশমায় মোদি গুজরাতের ধস অনেকটা রক্ষা করতে পেরেছেন বটে। কিন্তু, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে, গুজরাতের বিধানসভা ভোটের ফল বড়সড় ইঙ্গিত দিয়ে গেল।