পারভেজের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ২ কিমি। সাদা চোখে দেখলে, ২ কিমি রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে আসা তো মামুলি ব্যাপার। হোক না পাহাড়ি রাস্তা! এমন পাহাড়ি রাস্তায় জীবনের চড়াই-উতরাই ভাঙে কত না ছেলে-মেয়ে! তা হলে পারভেজ এমন কোন অসাধ্য সাধন করে!
আরও পড়ুন- যত ইচ্ছে Luggage নিয়ে ট্রেনযাত্রা আর নয়! নতুন নিয়ম চালু করল ভারতীয় রেল! জানুন...
advertisement
দাঁড়ান, গল্পটা পুরো শুনুন আগে। পারভেজকে রোজ এই ২ কিমি পাহাড়ি, পাথুরে রাস্তা আসতে হয় এক পায়ে ভর করে। লাফিয়ে চড়তে হয় পাহাড়ের ঢাল, আবার সেই এক পায়েই ফিরতে হয় পাথুরে পথ পেরিয়ে। পারভেজের রোজনামচা এটাই। একটা পা, সেটাই ভরসা। আর সেই ভরসাতেই জীবনে বড় কিছু করে দেখানোর সাহস দেখায় পারভেজ।
সম্প্রতি পারভেজের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। পারভেজ এক পায়ে লাফিয়ে পেরোচ্ছে পাহাড়ি রাস্তা। একটা পায়ে ভর করে লাফাতে লাফাতে সে আসছে স্কুলে, নির্ধারিত সময়ে। লাফিয়েই ভাঙছে স্কুল আর জীবনের সিঁড়ি। মুখের কথা!
বিহারের জামুইয়ের সীমার একটি ভিডিও কিছুদিন আগে ভাইরাল হয়েছিল। সীমার মতো একই লড়াইয়ের গল্প লিখছে পারভেজ। দেশের আরেক প্রান্তে। সীমার ইচ্ছে, বড় হয়ে শিক্ষক হবে! পারভেজও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখে। এক পায়ে ভর করেই।
এক দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়েছে পারভেজ। অভাবের সংসার। তাই কৃত্রিম পা-ও আর জোটেনি। হান্দওয়াড়ার একটি সরকারি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে পারভেজ। পিঠে ব্যাগ নিয়ে রোজ ২ কিমি পাহাড়ি রাস্তা লাফিয়ে লাফিয়ে পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাঁকে।
লড়াইয়েরও একটা সীমা থাকে। পারভেজ আক্ষেপে করে বলে, ''আমি জীবনে বড় কিছু করতে চাই। রোজ স্কুলে আসি এভাবে লাফিয়ে। পাহাড়ি রাস্তা তো, তাই কষ্ট হয় খুব। একটা কৃত্রিম পা যদি পেতাম!'' কতদূর পৌঁছয় তাঁর কথাগুলো! কে জানে! সীমার কথা কিন্তু পৌঁছেছিল সোনু সুদের কান পর্যন্ত।
আরও পড়ুন- গ্রাহকের কাছ থেকে রেস্তোরাঁর সার্ভিস চার্জ নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি, জানাল সরকার!
পারভেজকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হুইলচেয়ার দিয়েছিল। তবে পাহাড়ি রাস্তায় সেই হুলচেয়ার বেয়ে আসা অসম্ভব। পারভেজের লড়াইয়ে অস্ত্র হতে পারে মাত্র একটা কৃত্রিম পা। সামান্য ব্যাপার। আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের কথা পৌঁছে দেয় মানুষের কাছে। পারভেজের কথা পৌঁছেছে অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। পারভেজকে হয়তো আর লাফিয়ে স্কুলে আসতে হবে না! কৃত্রিম পা-ই তাঁকে পৌঁছে দেবে জীবনের বড় লক্ষ্যে। হোক না পাথুরে পথ! পারভেজরা কবেই বা সোজা পথে গন্তব্যে পৌঁছেছে!