এই যুদ্ধের পর পাকিস্তানের প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুন: ভারত পাক সম্পর্ক তলানিতে, পরমাণু আক্রমণ হলে কী করবেন! বাঁচার উপায় জানুন…
advertisement
ভারতের এই বিজয় সেই সময় এসেছিল, যখন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল পশ্চিমী জোট এবং আরব বিশ্ব। এখন প্রায় ৫৫ বছর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবার উত্তেজনা বেড়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকা দৃঢ়ভাবে পাকিস্তানের পাশে ছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তাঁরা দু’জনই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে মোটেও পছন্দ করতেন না। যুদ্ধের এক মাস আগে ইন্দিরা গান্ধী যখন আমেরিকা সফরে যান, তখন নিক্সন তাকে অফিসের বাইরে বসিয়ে রেখেছিলেন।
যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমেরিকার কাছে জরুরি সহায়তা চেয়ে বার্তা পাঠান, যার জবাবে আমেরিকা তাদের সেভেনথ ফ্লিট, USS Enterprise-সহ বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি ছিল একটি পারমাণবিক চালিত যুদ্ধ জাহাজ, যা সাতটি ডেস্ট্রয়ার, একটি হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার USS Tripoli এবং একটি ট্যাংকারসহ গঠিত ছিল। আমেরিকার এই শক্তিশালী নৌ বাহিনীকে মোকাবিলার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নও তাদের রণতরী পাঠায়। রাশিয়ার এই রনতরী সর্বক্ষণ মার্কিন রণতরীকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর মার্কিন রনতরী ফিরে যায়।
এই যুদ্ধে পাকিস্তানকে শুধু আমেরিকা সাহায্য করেনি, পাশে ছিল চীনও। সেই চীন যারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যপদ চাওয়ার সময় চীন ভেটো দেয়। ১৯৭৫ সালে তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের পরিস্তিতি দেখে শ্রীলঙ্কা সেই সময় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়৷ তারা পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলোকে তাদের বান্দারনায়েক বিমানবন্দরে নামতে ও জ্বালানি ভরতে অনুমতি দিয়েছিল।
সেই সময় বিশ্বে চলছিল শীতল যুদ্ধ, যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা ছিল দুটি প্রধান শক্তি। আমেরিকা চায়নি কোথাও কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হোক, আর সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট সরকার গঠন করতে চেয়েছিল।
পাকিস্তান ছিল আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাই আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেয়। আমেরিকা জর্ডান ও সৌদি আরবকেও পাকিস্তানের পক্ষে আনতে চেয়েছিল। সেই সময় লিবিয়াও পাকিস্তানের সাহায্যে তাদের যুদ্ধবিমান পাঠায়। ইরানের তৎকালীন শাহ রেজা পাহলভী পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন।
বর্তমানে বিশ্বের পুরো ছবিটাই বদলে গেছে। ২০২৫ সালের উত্তেজনার মধ্যেও আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্স জানিয়েছেন, ‘এই বিষয় আমাদের নয়’, অর্থাৎ তারা এই বিরোধে হস্তক্ষেপ করবে না। পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালে যারা সাহায্য করেছিল, তাদের সঙ্গে এখন ভারতের সম্পর্ক অনেক ভালো এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমেরিকার এখন আফগানিস্তানে কোনো স্বার্থ নেই, ফলে পাকিস্তানের গুরুত্বও নেই।
শুধুমাত্র চীন আজও পাকিস্তানের পাশে আছে, কারণ তারা পাকিস্তানে অনেক বিনিয়োগ করেছে। তবে ভারতের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক পাকিস্তানের চেয়েও বড়।