এই বৈঠকে ভারত ও জাপান মিলে কার্বন ক্যাপচার, গ্রীন কেমিক্যালস, বায়োফুয়েল, ক্লিন হাইড্রোজেন এবং অ্যাডভান্সড টেকনোলজিতে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাইরে থেকে এটি একটি প্রযুক্তিগত চুক্তি মনে হলেও এর কৌশলগত ও রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক গভীর।
আমেরিকার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে
গত দশকে ভারত আমেরিকার সঙ্গে ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট, ২+২ ডায়ালগ, কোয়াড এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যারিফ ও চাপ প্রয়োগের নীতি ভারতে ভিন্ন কৌশল নিতে বাধ্য করেছে। এখন ভারত জাপান, রাশিয়া ও ইউরোপের মতো নির্ভরযোগ্য সহযোগীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে।
advertisement
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৩০ আগস্ট জাপান সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক হবে। শোনা যাচ্ছে, এই সফরে জাপান ভারতে আগামী এক দশকে প্রায় ৫.৯৫ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা করতে পারে।
জাপান কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জাপান শুধুমাত্র প্রযুক্তির উৎস নয়, কৌশলগতভাবে চিনের মোকাবিলায় ভারতের প্রাকৃতিক সঙ্গী। কার্বন ক্যাপচার থেকে ক্লিন হাইড্রোজেন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিতে জাপানের নেতৃত্ব রয়েছে। দিল্লি মেট্রো থেকে মুম্বই-আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেন— ভারতের অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার মতো হঠাৎ শর্ত চাপিয়ে দেওয়া বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঝোঁক জাপানের নেই, তাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকে।
আরও পড়ুন: ৫ বছর পর ফের ভারতে ফিরতে চলেছে TikTok! জল্পনা তুঙ্গে…
বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত – মন্ত্রিসভা পর্যায়ের আলোচনায় ভারত-জাপান যৌথভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়— কার্বন ক্যাপচার, গ্রিন কেমিক্যালস, বায়োফুয়েল, ক্লিন হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া প্রজেক্ট, নবায়নযোগ্য শক্তির বিস্তার এবং এনার্জি এফিসিয়েন্সি প্রোগ্রাম।
ইন্দো-প্যাসিফিক বার্তা – উভয় দেশ জানিয়েছে, এ সহযোগিতা কেবল শক্তি নয়, বরং ইন্দো-প্যাসিফিকে নিরাপদ, লচিল ও টেকসই এনার্জি সিস্টেম গড়ে তুলবে। এ বার্তা স্পষ্টতই চিনের উদ্দেশ্যে— এশিয়ায় এনার্জি ও টেকনোলজির সাপ্লাই লাইনে তার একচেটিয়া আধিপত্য চলবে না।
সঠিক সময়ের পদক্ষেপ – এই ডায়ালগ এমন সময়ে ঘটল যখন ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, চিন-রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এবং ইউরোপ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক এই মুহূর্তে ভারত জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা করে দেখিয়ে দিল যে, একতরফা নির্ভরতার বদলে মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট কৌশলেই এগোচ্ছে।
ভারতের এতে কী কী লাভ – এনার্জি সুরক্ষা: জাপানের সহযোগিতায় ভারত পাবে স্থায়ী ক্লিন এনার্জি টেকনোলজি। ইনোভেশন অ্যাক্সেস: বায়োফুয়েল ও হাইড্রোজেনে জাপানের নেতৃত্ব থেকে সরাসরি সুবিধা। কৌশলগত বার্তা: আমেরিকার কাছে ইঙ্গিত যে ভারত একতরফা চাপ মেনে নেবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক লিডারশিপ: চিনের মোকাবিলায় ভারত-জাপান ফ্রন্ট হবে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।