একসময়ে দিল্লির দিল বলত, ‘হিন্দি চিনি ভাই ভাই’। সেই চিনই একাধিকবার রক্তাক্ত করেছে ভারতকে। সালটা ১৯৬২। ২০ অক্টোবর। এখনকার অরুণাচলপ্রদেশ তখন ছিল নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি। নেফা। এই নেফা ও লাদাখে একসঙ্গে হামলা চালায় চিনের লাল ফৌজ। চিন নেমেছিল প্রস্তুত হয়ে। পরিকল্পনা করে। কিন্তু, ভারত একেবারেই তৈরি ছিল না। ছিল শুধু অসীম সাহস। মূলত তার বলেই লড়ে যান ভারতীয় সেনা জওয়ানরা। ডোগরা ও কুমায়ুন রেজিমেন্টের জওয়ানরা চিনকে অনেক জায়গায় রুখেও দেয়। কিন্তু, সেটাই যথেষ্ট ছিল না।
advertisement
লাদাখে ৮টি এবং নেফায় ২০টি ভারতীয় সেনা পোস্ট গুঁড়িয়ে দেয় চিনা সেনা ৷ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু জানান,‘চিনা সেনা হামলা চালিয়েছে। আমাদের দেশে ঢুকে পড়েছে। ভারতীয় সেনার উপর হামলা চালিয়েছে। চিনের সেনা সংখ্যায় অনেক বেশি। চিন আমাদের সেনাদের হঠিয়ে দিয়েছে ৷’
বাষট্টির যুদ্ধের শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ভারতের পক্ষে চিনকে রোখা কঠিন। যত দিন গেছে, চিন একের পর এক ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে। লাদাখ ও অরুণাচলের বিস্তীর্ণ এলাকায় তখন চিনের লাল পতাকা। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর দেশবাসীর উদ্দেশে রেডিওয় বার্তা দেন, নেফার বমডিলাও আমাদের হাতছাড়া হল। কষ্ট হচ্ছে বলতে যে ভারতীয় সেনাকে পিছু হঠতে হয়েছে। আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কয়েকদিনের জন্য নয়। অনেক দিনের জন্য। মাস নয়, অনেক বছর ধরে লড়তে হবে। আমাদের লড়ে যেতে হবে। এর মধ্যে কোথাও পরাজিত হলে সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই এগোতে হবে ৷
নেহরু দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দেন। কিন্তু, চিন আর লড়াইয়ের সুযোগ দেয়নি। ২০ নভেম্বর রাতে, চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ঘোষণা করে দেন, যুদ্ধ শেষ। সংঘর্ষ বিরতি। এতে যুদ্ধ তো শেষ। কিন্তু, ঘা রয়ে গিয়েছে আজও। ১ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ভারত অনেক কিছু হারায়।ভারতের ৪২ হাজার ৭৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয় চিন৷
৪২ হাজার ৭৩৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা মানে যেখানে দিল্লির মতো ২৮টি শহর ধরে যাবে ৷ ১৯৬২-তে চিনের সঙ্গে যুদ্ধে শহিদ হন ১ হাজার ৩৮৩ জন ভারতীয় সেনা ৷ আহত হন ১ হাজার ৪৭ জন ৷ ১ হাজার ৬৯৬ জন জওয়ান একেবারে বেপাত্তা ৷ চিনের হাতে বন্দি হন ৩ হাজার ৯৬৮ জন সেনা ৷ বাষট্টিতে চিনের কাছে হার, ভারতের বুকে বড় ক্ষত। সেই হার থেকে দেশ শিক্ষা নিয়েছে। চিনও তা জানে। বেজিংও এখন মানে, ১৯৬২ এবং ২০২০ এক নয়।
পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ। এমন দুই দেশের মধ্যে লাঠি- সোঁটা-পাথর নিয়ে মারামারি। সীমান্তে চরম উত্তেজনা। যুদ্ধ যুদ্ধ হাওয়া। ২০২০-র ভারত প্রস্তুত।
ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, চিনা সেনা যে এলাকা পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছিল, সেখানেই রয়ে গিয়েছে ৷ সীমান্ত বরাবর সৈন্য সমাবেশ বাড়িয়েছে দু’দেশই ৷ উপগ্রহ চিত্রে তা স্পষ্ট ৷ শ্রীনগর থেকে বাড়তি সেনা পাঠানো হয়েছে লাদাখে ৷ সেনা সমাবেশ বাড়াতে শুরু করেছে চিন ৷ প্রস্তুত বাঙ্কার ৷ বসানো হয়েছে কামানও ৷ নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে চিনের দিকে একাধিক কপ্টার ওড়ার কথাও জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৷