ওড়িশার বালাসোরের কাছে বাহানাগা রোড স্টেশনে গত ২ জুন ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটে৷ দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস৷ উল্টো দিক থেকে আসা হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেসও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে৷ সবমিলিয়ে মৃত্যু হয় ২৮৮ জন যাত্রীর৷ আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়৷
দুর্ঘটনার পরই জানা যায়, করমণ্ডল এক্সপ্রেস মেন লাইন ছেড়ে পাশের লুপ লাইনে ঢুকে পড়ার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু সবুজ সিগন্যাল দেওয়া সত্ত্বেও নিজের লাইন ছেড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস কী করে পাশের লুপ লাইনে ঢুকল, তা নিয়েই রহস্য দানা বাঁধে৷ অন্তর্ঘাতের তত্ত্বও উঠে আসে৷
advertisement
আরও পড়ুন: এবার মেট্রোর লাইনে ফাটল! বড় বিপদ থেকে বাঁচালেন চালক, ভোগান্তি যাত্রীদের
প্রশ্ন উঠে যায় রেলের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও৷ রেলওয়ে সেফটি কমিশনার বা সিআরএস ছাড়াও দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই৷ রেলের সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টার্সের দাবি, সিআরএস তদন্তে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই রেলের একটি লেভেল ক্রসিংয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ যার জেরে সিগন্যালিং ব্যবস্থাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ সমস্যা ঠিক করতে কাজও শুরু করেছিল রেল৷ আর সেই কাজ করতে গিয়েই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল রয়টার্সের কাছে দাবি করেছে রেলের অন্তত দুটি সূত্র৷ যেহেতু রেলের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুমোদিত নন, সেই কারণেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তাঁরা৷ তবে এ বিষয়ে রেলওয়ে সেফটি কমিশনার কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷
রেলের এক মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, প্রয়োজন মতো মেরামতি কাজ করা হলেও কোনও জায়গাতেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হয় না৷ রেল মন্ত্রকের চিফ ইনফরমেশন অফিসার অমিতাভ শর্মাও দাবি করেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও কিছুই নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়৷
বাহানাগা গ্রামের অন্তত পাঁচ জন বাসিন্দাও রয়টার্স-কে জানিয়েছেন, গত প্রায় তিন মাস ধরে দুর্ঘটনাস্থলের কাছে একটি রেলের ক্রসিংয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ মাঝে মধ্যেই ওই লেভেল ক্রসিংয়ের স্বয়ংক্রিয় গেট খারাপ হয়ে যেত৷ ফলে একবার গেট পড়ে গেলে তা উঠত না৷ তখন রেলকর্মীদের হস্তক্ষেপ করতে হত৷ নিয়ম মতো গেট খোলা থাকলে ট্রেন চলাচলের জন্য সিগন্যাল না দেওয়ার কথা৷ যদিও ঘটনার দিন ওই লেভেল ক্রসিংয়ে কোনও সমস্যা ছিল না বলেই নিরঞ্জন সারঙ্গি স্থানীয় এক বাসিন্দা দাবি করেছেন৷
বালাসোরের তদন্তের বিষয়ে অবহিত তিন জন রেল আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেছিল সংবাদসংস্থা রয়টার্স৷ ওই তিন সূত্রেরই দাবি, সিআরএস-এর প্রাথমিক তদন্তে স্বয়ংক্রিয় ইলেক্ট্রনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা কোনও মানুষের দ্বারা বদল করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে৷ যার জন্য সিগন্যালিং ব্যবস্থার সফটওয়্যারেও বদল করতে হয়৷
এক সূত্রের কথায়, রেল মনে করছে সফটওয়্যারে কোনও রকম অদলবদল করা হয়েছিল৷ তবে তা ইচ্ছে করে করা হয়েছিল নাকি মেরামতি কাজ করতে গিয়ে ভুল করে হয়ে গিয়েছিল, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
এই তিন সূত্রের মধ্যে আর একজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, লেভেল ক্রসিংয়ে মেরামতি কাজ চলছিল বলেই সিগন্যালিং ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন৷