প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠিতে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, এই সিদ্ধান্তে তিনি মর্মাহত এবং আহত হয়েছেন। উল্লেখ করেছেন যে রাজ্যের ট্যাবলোটি কোনও কারণ ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করতে এবং ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে রাজ্যের স্বাধীনতার যোদ্ধাদের নিয়ে ট্যাবলো অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন।
advertisement
এই প্রথমবার নয়, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের জন্য কোনও রাজ্যের ট্যাবলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ২০২০ সালেও, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কেরালা এবং বিহারের ট্যাবলোগুলি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, যার ফলে রাজ্যগুলি থেকে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।
সেই সময়ে বাংলার অভিযোগ ছিল যে রাজ্য নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে ট্যাবলো। দাবিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রত্যাখ্যান করেছিল, বলেছিল যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দুটি বৈঠকে পরীক্ষা করার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
যাই হোক, ২০১৬ সালে, রাজ্যের লোক ও বাউল গায়কদের নিয়ে বাংলার ট্যাবলোটি সেরা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে তিনটি সেরা পুরস্কারও পেয়েছিল। প্রতি বছর, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রক থেকে শুধুমাত্র নির্বাচিত সংখ্যক ট্যাবলো অংশগ্রহণ করে।
আরও পড়ুন: দৈনিক সংক্রমণ কমলেও দেশজুড়ে বাড়ল করোনায় মৃত্যু! শিকার বাড়ল ওমিক্রনেরও
সেপ্টেম্বরে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিবদের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছিল, যে ট্যাবলো বাছাই প্রক্রিয়া একটি বিস্তৃত এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়। এটি সময়ের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতেও নির্বাচন করতে হয়।। শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এই চিঠি অনুসারে, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর স্মরণে ২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের থিম হবে 'India@75'।
কী ভাবে ট্যাবলো নির্বাচন করা হয়
প্রতিরক্ষামন্ত্রক সেরা ট্যাবলোগুলিকে বাছাই করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে।
এই বিশেষজ্ঞ কমিটি - শিল্প, সংস্কৃতি, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, সঙ্গীত, স্থাপত্য, কোরিওগ্রাফির ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে - সংক্ষিপ্ত তালিকা এবং চূড়ান্ত বাছাই করার জন্য গৃহীত হওয়া প্রস্তাবগুলি নিয়ে ছয় থেকে সাত দফা বৈঠক করে৷ বাছাইয়ের প্রথম ধাপে বিভিন্ন প্রস্তাবের স্কেচ বা নকশা পরীক্ষা করা হয় এবং কোনও পরিবর্তনের বিষয় থাকলে এর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কমিটি অনুমোদন দিনে, অংশগ্রহণকারীরা তাদের প্রস্তাবের ত্রিমাত্রিক মডেল প্রস্তাব করে। তারপরে প্যানেল দ্বারা মডেলগুলি আবার পরীক্ষা করা হয়।
একটি ট্যাবলোর সম্ভাব্য নির্বাচনের নিয়ম, জনসাধারণের উপর প্রভাব, এর পিছনে সমাগ্রিক বার্তা, বিভিন্ন অবস্থান বিষয়ে আলোচনা, সঙ্গীতের ব্যবহার, দৃশ্যগত দিক বিচার করা হয়। কমিটির সদস্যরা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ট্যাবলো শিল্পীরা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না, যদি না তেমন নির্দেশ আসে। প্যারেডে একটি সংস্থা থেকে শুধুমাত্র একটি ট্যাবলো অংশগ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে ৫৬-টির মধ্যে এ বার ২১টি ট্যাবলো নির্বাচিত হয়েছে, যেগুলি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যরা প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছিল।
আরও পড়ুন: গঙ্গাসাগরের পরেও সংক্রমণের হার ৩ শতাংশ, 'অভিষেক মডেল'-এ আলো দেখছে ডায়মন্ড হারবার
সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞ কমিটি আলোচনা এবং একটি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই কেরল, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁরা আরও বলেছেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে অনুমোদনের চেয়ে বেশি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়া স্বাভাবিক। কেরলের প্রস্তাবগুলি ২০১৮ এবং ২০২১ সালে একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গৃহীত হয়েছিল, যখন তামিলনাড়ুর প্রস্তাবগুলি ২০১৬, '১৭, '১৯, '২০ এবং '২১ সালে গৃহীত হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবগুলি ২০১৬, '১৭, '১৯ এবং '২১ সালে গৃহীত হয়েছিল।