জম্মু কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে গুলমার্গ, সোনমার্গ বা ডাল লেকের মতোই বরাবরের বড় আকর্ষণ সবুজ, পাহাড়ি নদী, উপত্যকায় ঘেরা পহলগাঁও৷ মঙ্গলবার সেই পহলগাঁওই সাম্প্রতিককালে উপত্যকার সবথেকে বড় জঙ্গি হামলার সাক্ষী থাকল৷ পহলগাঁওয়ের বৈসরণ নামে যে জায়গায় এই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, দক্ষিণ কাশ্মীরের সেই অংশটি মিনি সুইৎজারল্যান্ড নামে খ্যাত৷ সেই বৈসরণের উপত্যকার সবুজ ঘাষই পর্যটকদের রক্তে লাল হল মঙ্গলবার৷
advertisement
আরও পড়ুন: পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীদের রেয়াত নয়, হুঁশিয়ারি মোদির! রাতেই শ্রীনগর যাচ্ছেন শাহ
প্রাথমিক ভাবে এই হামলার পর পাঁচ জন পর্যটকের আহত হওয়ার খবর এসেছিল৷ কিন্তু হামলার মাত্রা যে তার তুলনায় অনেক বড়, এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে প্রথম সেই ইঙ্গিত দেন জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ৷ তিনি লেখেন, গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের উপরে কাশ্মীরে হামলার যা যা ঘটনা ঘটেছে, তার তুলনায় এই হামলা অনেক বড়৷
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ এই হামলার ঘটনা ঘটে৷ বৈসরণের যে জায়গায় পর্যটকরা ভিড় করেছিলেন, তার পাশের একটি পাইন বন থেকে আচমকা বেরিয়ে আসে সেনা পোশাকে থাকা দুই থেকে তিন জন জঙ্গি৷ জনা চল্লিশেক পর্যটকদের একটি দলের উপরে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে তারা৷
ঘটনার আকস্মিকতায় রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েন আতঙ্কিত পর্যটকরা৷ কী করবেন বুঝে ওঠার আগেই গুলি লেগে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন৷ প্রাণভয়ে পালানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি৷ গুলি বৃষ্টি থামলে কোনওক্রমে প্রিয়জনদের বাঁচাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেই কাতর আর্জি জানাতে থাকেন রক্তাক্ত, আহত পর্যটকরা৷ এর পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ, সেনা এবং উদ্ধারকারী দল৷ ততক্ষণে অনেক পর্যটকেরই নিথর দেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে৷
ঘটনার পর আহত পর্যটকদের উদ্ধারে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে প্রশাসন৷ অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ঘোড়া এবং খচ্চরের পিঠে করেও বেশ কিছু পর্যটককে নীচে নামিয়ে আনেন৷ বেশ কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর আবার অভিযোগ, জঙ্গিরা গুলি চালানো শুরু করতেই স্থানীয় বাসিন্দারা খচ্চরের পিঠে পর্যটকদের বসিয়ে রেখে নিজেরা নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যান৷
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক পর্যটকের কথায়, আমি নিজের স্ত্রীর সঙ্গে ছিলাম৷ হঠাৎ বন্দুকধারী দু জন জঙ্গি দেখতে পাই যারা নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল৷ প্রচুর গুলি চলেছে৷
বৈসরণ নামে পহলগাঁওয়ের যে জায়গায় এই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বলিউডের বহু বিখ্যাত ছবির শ্যুটিংও হয়েছে৷ দুর্গম এই জায়গাটিতে পৌঁছতে একমাত্র ভরসা ঘোড়া অথবা খচ্চর৷ ফলে হামলার খবর পাওয়ার পর পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীরও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লেগে যায়৷ পরে অবশ্য গোটা এলাকা ঘিরে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে৷
