আরও পড়ুন- আইএএস আইন সংশোধনের চেষ্টা হলে আদালতের দ্বারস্থ হবে তৃণমূল
জাতীয় স্তরে তৃণমূল কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের কাছে পৌঁছতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি কংগ্রেসের। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কয়েক সপ্তাহ আগে সনিয়া গান্ধির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বলেন অতীতের অভিজ্ঞতা ভুলে ২০২২ সালে এক নতুন সূচনার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। সনিয়াজি জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজের দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি,” পিটিআইকে বলেন পবন ভার্মা।
advertisement
গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) জানিয়েছেন, কংগ্রেস জানিয়েছে যে তারা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাবে, কিন্তু কিছুই এগোয়নি। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক সবচেয়ে তলানিতে ঠেকেছিল ২০২১ সালে। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থ ‘অক্ষম ও অযোগ্য’ দল বলে কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা।
আরও পড়ুন- কেন নাম দেওয়া হল 'ভর্তি বিধান'? উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ইস্তাহারের একাধিক চমক
অন্যদিকে জোট গড়তে রাজি না হওয়ায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রস্তাবে সায় না দেওয়ার জন্য পি চিদম্বরমকে দোষারোপও করেছেন তিনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন তৃণমূলের সহ-সভাপতি পবন ভার্মা (TMC Vice President Pawan Verma) জোটের প্রস্তাব দিতে গত ২৪ ডিসেম্বর পি চিদম্বরমের (P Chidambaram) সঙ্গে দেখাও করেছিলেন কিন্তু কংগ্রেসের তরফে কোনও উত্তরই মেলেনি। বর্ষীয়ান এই নেতাকে এদিন কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “চিদম্বরম নিজের দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।”
দলের অন্দরের খবর, তৃণমূল কংগ্রেস জোটের ব্যর্থতার তত্ত্ব সামনে এনে দোষ চাপাতে চাইছে কংগ্রেসের উপর। “যদি গোয়ার নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির পক্ষে যায়, চিদম্বরমের জনসমক্ষে আসা উচিত এবং যদি তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হন তবে এর দায়ও নিজের কাঁধেই নেওয়া উচিত,” বলেন অভিষেক।
“অতীত ভুলে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। গোয়ায় বিজেপিকে রুখতেই হবে আমাদের। আশ্চর্যের বিষয় হল, চিদম্বরম এখন বলছেন যে কোনও নির্দিষ্ট প্রস্তাবই ছিল না,” জানিয়েছিলেন পবন। এই একই বিষয়ে পি চিদম্বরমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই বিষয়ে আর কথা বলতে চান না তিনি, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে যা কথা বলার তা বলা হয়ে গিয়েছে।
লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) যথেচ্ছ আক্রমণ করেছেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে। অধীর জানিয়েছেন, জাতীয় রাজনীতিতে একঘরে হওয়ার পরে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট সংগঠিত করার দাবি আসলে নাট ছাড়া কিছুই নয়। “তৃণমূল গভীর হতাশা থেকে সনিয়া গান্ধির কাছে গিয়েছে৷ ২০ অগাস্ট সনিয়াজির ডাকা বিরোধী দলগুলির বৈঠকের পরে তৃণমূল হঠাৎ করেই বেঁকে বসে এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে শুরু করে। আমাদের নেতৃত্বের অপমান থেকে শুরু করে মেঘালয় সহ অন্যান্য রাজ্যে আমাদের নেতাদের দল ভাঙানোর চেষ্টা করা পর্যন্ত, সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল,” পিটিআইকে বলেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর রঞ্জন।
কংগ্রেসকে তাচ্ছিল্ল্য করতে কোনও পথ বাকি রাখছে না তৃণমূল এই অভিযোগ করে অধীর আরও জানান, কংগ্রেস যে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে পারার ক্ষমতা রাখে না এমন কথা বলা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। “যখন অন্যান্য দলগুলি স্পষ্টভাবে বলেছে যে কংগ্রেস ছাড়া কখনই বিরোধী জোট হতে পারে না সেখানে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৃণমূলের এই প্রচেষ্টা বস্তুত দেওয়ালে মাথা ঠোকা! তৃণমূল তো বিজেপির এজেন্ট। এখন জাতীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হওয়ার পরে আমাদের কাছে এসেছে তারা। ওরা কখনই বিশ্বাসযোগ্য জোটসঙ্গী নয়,” সাফ জানিয়েছেন অধীর।
কংগ্রেসের সূত্রের খবর, গোয়াতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে কংগ্রেস আগ্রহী নয় কারণ নিজেদের জয়ের বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী। অতি সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’ দাবি করে যে রাহুল গান্ধি নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বিরোধীদের মুখ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যেকার রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও কিঞ্চিত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই বয়ানের পরেই।