সিদ্ধিদাতা নামে তাঁর সর্বত্র পরিচয়। আজ চতুর্থীর পুণ্য লগ্নে সর্বসিদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে শ্রীগণেশের (Lord Ganesha) আরাধনা করছেন ভক্তেরা দেশ জুড়ে। কিন্তু সিদ্ধি আদতে কী? সর্বকাজে সফলতা? সংস্কৃত ভাষায় সিদ্ধি শব্দটির একটি অন্যরকম অর্থ রয়েছে। সিদ্ধি বলতে সেখানে যেমন বোঝানো হয়েছে সার্বিক সাফল্য, তেমনই সিদ্ধি বলতে বোঝানো হয়েছে সংস্কৃত হরফকেও। তাহলে সংস্কৃত হরফ যিনি দান করেছিলেন, তিনিই সিদ্ধিদাতা? কেন নয়? এই হরফেই তো কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাসের মুখ থেকে শুনে মহাভারত রচনা করেছিলেন প্রথমপূজ্য, আজও আমাদের দেশের জোড়া গুহা তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
advertisement
মহাভারত রচনার প্রেক্ষাপট
কুরু-পাণ্ডবের ধর্মাধর্মের নির্ণয় হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৮ দিনে। যুদ্ধের পর ভরতবংশ কার্যত ধ্বংসস্তূপ, চারদিকে কেবল বিরাজ করছে বৈধব্যের স্তব্ধতা, স্বজনশোকের স্বনন। শান্তি পাচ্ছেন না বেদব্যাসও, তাঁরই কল্যাণে অকালগত বিচিত্রবীর্যের পত্নী অম্বিকা আর অম্বালিকা লাভ করেছিলেন যথাক্রমে ধৃতরাষ্ট্র আর পাণ্ডুকে। সেই ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রলাভের মূলেও ছিলেন তিনিই। এখন যদিও সুবিশাল বংশের হোতা কাউকেই আর জীবিত দেখছেন না প্রায়। এই শোকের আশ্রয় ছিল কেবল শ্লোক, যা দেখেছেন, যা ঘটেছে, তা লিখে যেতে পারলে যেন ভারমুক্ত হওয়া যায়। ব্রহ্মাও সেই ইচ্ছায় সিলমোহর দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাস সন্দিহান- এই ঘটনাপ্রবাহ লেখার কাজ কি তাঁর শারীরিক শক্তির অনুকূল? ব্রহ্মারই পরামর্শে অতঃপর তাঁর শ্রীগজানন স্মরণ, আবির্ভূত হয়ে প্রতিশ্রুতিও দিলেন গৌরীসূত- তিনি লিখে দেবেন!
মহাভারত রচনার শর্ত
তবে জন্মলগ্ন থেকেই যিনি একাধারে বিঘ্নহর্তা এবং বিঘ্নকর্তা, তাঁর লীলা বোঝা দুষ্কর! ব্যাসও বুঝতে পারেননি যে এরকম একটা শর্ত দেবেন গণপতি। বলবেন- শ্লোক বলতে বলতে ব্যাস যদি থেমে যান, তবে তাঁর কলমও থামবে একেবারে! বিস্ময় সামলে ব্যাসও রাখলেন পাল্টা শর্ত- তিনি বলা থামাবেন না, তবে লম্বোদরও অর্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না। সম্মত হলেন গণেশ, শুরু হল মহাভারত লেখা। যাতে বুঝতে দেরি হয়, ব্যাস সেই জন্য রচনা করে চললেন একের পর এক হেঁয়ালি, যাকে বলা হয় ব্যাসকূট। সেই কূটশ্লোকের অর্থ নিরূপণ আজও না কি সম্ভব হয়নি, বুঝেছিলেন কেবল গণেশ। আর এই কাজ চলেছিল হিমালয়ের কোলে জোড়া গুহায়। যা আজ পরিণত হয়েছে তীর্থে।
উত্তরাখণ্ডের ব্যাস গুহা
এই গুহার খুব কাছের বিখ্যাত এক বৈষ্ণবতীর্থ অনেকেই হয় তো ঘুরে এসেছেন, যাঁরা যাননি, তাঁদেরও বদ্রীনাথের (Badrinath Shrine) নাম অজানা নয়। হিমালয়ের উত্তরাখণ্ড জেলার বদ্রীনাথ মন্দির থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই ব্যাস গুহা। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার মানা গ্রামে আধুনিক মানচিত্র অনুযায়ী তার অবস্থান। এখানে জোড়া গুহার একটিতে ব্যাস এবং অপরটিতে গণেশ থাকতেন বলা হয়। সেই অনুযায়ী দুই গুহায় তাঁদের পৃথক মূর্তিও রয়েছে। গুহাদুটিরও একটি ব্যাস গুহা (Vyas Cave), অন্যটি গণেশ গুহা (Ganesh Cave) নামে পরিচিত। ভারতকথার পীঠস্থান এই গুহাদর্শনেই সিদ্ধিলাভ, আজ গণেশ চতুর্থীর (Ganesh Chaturthi 2022) শুভদিনে একথা ভুললে চলবে না।