৩৫ বছরের দয়া সাভালিয়া নামে এক মহিলা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিশ দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে তদন্ত চালিয়েও কোনও তথ্য পাচ্ছিল না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, খুনি পুলিশি তদন্তের সামনে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না, ফলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছিল না।
advertisement
পুলিশ শুরু থেকেই হার্দিক সুখাড়িয়াকে সন্দেহ করছিল। তাকে একাধিকবার জেরা করা হয়, এমনকি দুইবার ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু চতুর খুনি পুলিশকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়। পুলিশ তাকে গান্ধীনগর ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ভয়েস টেস্টের জন্য পাঠায়। এরপর আরও নানা পরীক্ষা করা হয়। তবে সব পরীক্ষাই এই অভিযুক্ত পাশ করে যায়।
এই রহস্যময় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল জুনাগড় জেলার ভিসাভদর তালুকার রুপাবতী গ্রামে। এখানকার বাসিন্দা দয়া সাভালিয়া হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান। জানা যায়, তার কাছে প্রায় ৯.৬০ লাখ টাকার গয়না ও নগদ টাকা ছিল। তার স্বামী বলভ সাভালিয়া পুলিশের কাছে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে উঠে আসে, গ্রামেরই বাসিন্দা হার্দিক সুখাড়িয়ার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিল, তবে সে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিল না।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা! মহাকুম্ভ থেকে ফেরার পথে ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দ্রুতগতির গাড়ির! ঘটনাস্থলেই মৃত ৪
প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় ছিল হার্দিক, তবুও ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। হার্দিক পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিল। কিন্তু সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বলে, দয়া “রাহুল” নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে গেছে, যার সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। নিজেকে বাঁচানোর জন্য হার্দিক নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিরতি দেয়, যাতে তার অবস্থান ট্র্যাক না করা যায়। পুলিশ যখন কোনও তথ্য পাচ্ছিল না, তখন হার্দিক নিশ্চিত হয়ে যায় যে সে এই মামলায় ধরা পড়বে না।
যখন দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ কোনও অগ্রগতি করতে পারছিল না, তখন মামলাটি স্থানীয় অপরাধ শাখা (LCB)-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করা হয় এবং হার্দিককে নতুন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে সে ভেঙে পড়ে এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেয়।
কীভাবে ঘটেছিল খুন? হার্দিক পুলিশকে জানায়, দয়া সম্পর্কটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সে এতে আগ্রহী ছিল না। তাই সে ঠান্ডা মাথায় হত্যার পরিকল্পনা করে। সে দয়াকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর প্রমাণ লোপাট করতে দয়ার দেহ একটি গভীর কুয়োয় ফেলে দেয়।
অবশেষে, ২৭ ফেব্রুয়ারি, হার্দিকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ দয়ার কঙ্কাল কুয়ো থেকে উদ্ধার করে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পুলিশ জানায়, হার্দিকের বিরুদ্ধে হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে পেশ করা হবে।
এই ঘটনার পর গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “খুনি অত্যন্ত চালাক ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার হয়েছে।”