আমাদের মতো বেশিরভাগ মানুষেরা শৌচাগারের (টয়লেট) অভাবের মানে কি হতে পারে সেটা সবার প্রথম ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ নামক একটা অসাধারণ মনকাড়া সিনেমার থেকে বুঝতে পেরেছি। আমরা দেখেছি যে ভূমি পেডনেকরের চরিত্রটা শৌচাগার (টয়লেট) ছাড়া জীবনযাপন করার বাস্তবতার সাথে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে, আর আমাদের লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেছিলো যখন খোলা জায়গায় টয়লেটে যাওয়ার জন্য তাঁকে চরম অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, আর সবথেকে ভয়ংকর ব্যাপার হলো যখন খোলা জায়গায় পায়খানা করতে গিয়ে হঠাত্ করে তিনি তাঁর শশুরমশাইয়ের মুখোমুখি হন। এটা আমাদের মনের মধ্যে একটা শক্তিশালী আর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
advertisement
আর এটা আমাদেরকে ভারতের বহু অঞ্চলের কথা ভাবতে বাধ্য করে যেখানে বর্ষায় ভারী বৃষ্টিপাত হয় যার ফলে সেসব জায়গায় বন্যা হয়, ধস নামে এবং জল জমে যায়। এটা আমাদেরকে বিশেষভাবে সেই সকল মানুষদের কথা ভাবতে বাধ্য করে যাঁদের শৌচাগারে (টয়লেট) জল জমে যায়, শৌচাগার (টয়লেট) ভেসে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত এবং নষ্ট হয়ে যায় আর টয়লেট করতে যাওয়ার জন্য তাঁদেরকে প্রচন্ড অপমান ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। একটা সাম্প্রদায়িক স্তরে, এই সকল লোকেরা শুধুমাত্র বন্যা, ধস বা জল জমে যাওয়ার কারণে তাঁদের উপর হওয়া ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীনই হন না, বরং তাঁদেরকে এমন অনেক রোগেরও মুখোমুখি হতে হয় যা নোংরা শৌচাগার (টয়লেট) আর খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থার থেকে জন্ম নেয়। এই রোগগুলো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তরুণ এবং বৃদ্ধদের মারাত্মক পরিণতি হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা আগে থেকে জানা যায় না, তবে সেটার জন্য তৈরি থাকা যেতে পারে। কিভাবে আমরা বর্ষার পরিস্থিতির জন্য একটা
স্থায়ী আর সকলের জন্য নিরাপদ ও উন্নতমানের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে নিশ্চিত করে এমন ধরণের শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করতে পারি?
বর্ষা–প্রবণ এলাকার জন্য স্থায়ী শৌচাগারের (টয়লেট) গুরুত্ব
মানুষের স্বাস্থ্য, সম্মান আর সুস্থতার জন্য শৌচাগার (টয়লেট) ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শৌচাগার (টয়লেট) রোগকে ছড়িয়ে পড়তে দেয় না, পরিবেশকে রক্ষা করে আর মানুষকে ক্ষমতা প্রদান করে, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদেরকে, যাঁরা শৌচাগারের (টয়লেট) সুবিধা ব্যবহার করার সময় বেশি পরিমাণে ঝুঁকি ও সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, 1.7 বিলিয়ন মানুষ এখনও পর্যন্ত সাধারণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে পারেন না আর বিশ্বব্যাপী 494 মিলিয়ন মানুষ এখনও পর্যন্ত খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন।
ভারতে, 2014 সালে শুরু হওয়ার পর থেকে স্বচ্ছ ভারত মিশন (SBM) স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে উন্নত করার ক্ষেত্রে আর খোলা জায়গায় মলত্যাগ করাকে বন্ধ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগতি করেছে। জল শক্তি মন্ত্রকের মতে, 600,000-এরও বেশি গ্রামে SBM-এর অধীনে 100 মিলিয়নেরও বেশি শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করা হয়েছে, আর তাঁরা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করাকেও 100% বন্ধ (ODF) করতে পেরেছে।
যদিও, এই উদ্যোগগুলো বার্ষিক বর্ষা ঋতু যা ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে সেখানে ঠিকমতো কাজ করে না। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত, প্রবল ঝড়, ধস, বন্যা আর ঘূর্ণিঝড় হয় যা শৌচাগার (টয়লেট) এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামোর ক্ষতি করতে পারে বা সেটাকে ধ্বংস করতে পারে। এর ফলে নিচে দেওয়া সমস্যাগুলো হতে পারে:
- লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শৌচাগার (টয়লেট) ব্যবহার করতে পারেন না।
- মানুষের মলমূত্র এবং রোগজীবাণু জলের উত্স আর মাটিকে দূষিত করে।
- ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদির মতো রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- যাঁরা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন বা যাঁদেরকে নিরাপদ নয় এমন বিকল্প ব্যবহার করতে হয় তাঁদের মানসম্মান আর গোপনীয়তা নষ্ট হয়।
- শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করতে ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য যে বিনিয়োগ ও সম্পদ ব্যয় করা হয়েছে সেটার ক্ষতি হয়।
- স্বচ্ছ ভারত মিশনের সাহায্যে অর্জন করা অনুপ্রেরণা এবং আচরণের পরিবর্তনের ক্ষতি হয়।
এই জন্যই আমাদেরকে এমন ধরণের শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করতে হবে যেটা এই সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করতে পারে। স্থায়ী শৌচাগার (টয়লেট) হলো এমন ধরণের শৌচাগার (টয়লেট) যা বাহ্যিক শক্তি যেমন জলের চাপ, হাওয়ার শক্তি, মাটির ক্ষয়, ইত্যাদি থেকে হওয়া ক্ষতি বা ধসে যাওয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে আর সেটাকে কোনো ক্ষতি বা ভাঙ্গনের থেকে তাড়াতাড়ি পুনরুদ্ধার করা যায়। স্থায়ী টয়লেটগুলো জলের স্তরের বৃদ্ধি, মাটির নিচের জলের ওঠানামা, আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদির মতো বিভিন্ন পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে, আর যাঁরা ব্যবহার করছেন তাঁদের বিভিন্ন চাহিদা যেমন জরুরী অবস্থা বা উৎসবের সময় বেশি করে ব্যবহার করার সাথেও মানিয়ে নিতে পারে।
বর্ষার কারণে হওয়া শৌচাগারের (টয়লেট) ক্ষতির প্রধান সমস্যা ও ঝুঁকি
স্থায়ী শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করার জন্য, বর্ষাকালে শৌচাগারগুলো যেসব প্রধান সমস্যা আর ঝুঁকির সম্মুখীন হয় সেগুলোকে আমাদের বুঝতে হবে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বন্যা: ভারী বৃষ্টিপাত, উপচে পড়া নদী বা হ্রদ, ঝড়ের সময় হওয়া জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের ঢেউয়ের কারণে বন্যা হতে পারে। বন্যার ফলে শৌচাগারের (টয়লেট) বিভিন্ন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে যেমন সেগুলো জলে ডুবে যেতে পারে, জলে ভেসে যেতে পারে বা সেগুলোর কাঠামো ভেঙ্গে যেতে পারে৷ বন্যার কারণে টয়লেটগুলো উপচে পড়তে পারে বা লিক করতে পারে, যার ফলে মল এবং নোংরা জল আশেপাশের পরিবেশকে দূষিত করে। বন্যার কারণে জল সরবরাহ বা জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে যা শৌচাগারের (টয়লেট) কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
- ক্ষয়: জলপ্রবাহ, হাওয়া, ধস বা মাটির অবক্ষয়ের কারণে ক্ষয় হতে পারে। ক্ষয় শৌচাগারের (টয়লেট) ভিতকে নষ্ট করে দেয় আর সেগুলোর কাঠামোকে দুর্বল করে দেয় যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কাঠামোর ক্ষতি: বন্যার জলের শক্তি শৌচাগারের (টয়লেট) কাঠামোকে দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ভিত বা দেওয়াল ধসে যাওয়ার ফলে, টয়লেটগুলো (পায়খানা-বাথরুম) ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে আর যাঁরা ব্যবহার করবেন তাঁদের জন্য অসুরক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
- জলের উত্স দূষিত হয়ে যাওয়া: যখন শৌচাগারগুলো (টয়লেট) জলে ভরে যায়, তখন কাছাকাছি জলের উত্সগুলো মল এবং নোংরা জলের দ্বারা দূষিত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে৷ এই দূষণ জনস্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ মানুষ জল পান করা, রান্না এবং অন্যান্য ঘরের কাজের জন্য এই জলের উত্সগুলোর উপর ভীষণভাবে নির্ভর করে।
- স্যানিটেশন পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটে: বর্ষায় শৌচাগারে (টয়লেট) হওয়া ক্ষতির কারণে স্যানিটেশন পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো উপযুক্ত সুবিধা থাকে না। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা তৈরি হতে পারে, রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে আর বিভিন্ন মানুষ বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের সম্মান নষ্ট হতে পারে।
- স্বাস্থ্যের ঝুঁকি: বর্ষাকালে কার্যকরী শৌচাগার (টয়লেট) না থাকার ফলে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার ঝুঁকিকে বাড়াতে পারে যার ফলে আরো বেশি করে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার সময় বিশেষ করে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার অভাবের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
- পরিবেশের উপর প্রভাব: বর্ষাকালে শৌচাগারের (টয়লেট) যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তার ফলে জলের উৎসে যে দূষণ হয় তা পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে নদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ের দূষণ হতে পারে যা জলজ বাস্তুতন্ত্র আর জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে।
- উঁচু পরিকাঠামো: টয়লেটগুলো (পায়খানা-বাথরুম) উঁচু জায়গার উপর তৈরি করা উচিত যাতে বন্যার জল এর মধ্যে না ঢুকতে পারে। টয়লেটকে মাটির স্তর থেকে উঁচু জায়গায় তৈরি করলে সেটাকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে আর বন্যার সময় এটা কার্যকরী থাকে।
- বন্যাকে প্রতিরোধ করবে এমন সামগ্রী: নির্মাণ সামগ্রী যেন জলের থেকে হওয়া ক্ষতিকে এবং ক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে পারে। শক্তিশালী বা রিইনফোর্সড কংক্রিট বা ফাইবার-রিইনফোর্সড প্লাস্টিকের মতো উপকরণ ব্যবহার করলে সেটা শৌচাগারের (টয়লেট) স্থায়িত্বকে বাড়াতে পারে এবং সেটাকে টেকসই করে তুলতে পারে।
- সঠিক নিকাশী ব্যবস্থা: শৌচাগারের (টয়লেট) নিকাশী ব্যবস্থা খুব ভালো হওয়া উচিত যাতে বর্ষাকালে বেড়ে যাওয়া জলপ্রবাহকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়। জলের উৎসের দূষণকে রোধ করার জন্য এর মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে নর্দমার জল ও বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করার পদ্ধতি রয়েছে।
- শক্তিশালী ভিত: বন্যার জলের চাপকে সহ্য করার জন্য মজবুত ও স্থিতিশীল ভিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিশালী বা রিইনফোর্সড কংক্রিট ফাউন্ডেশন (ভিত) বা পাইল ফাউন্ডেশন (ভিত) প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা প্রদান করতে পারে এবং পরিকাঠামোর ক্ষতিকে প্রতিরোধ করতে পারে।
- ভেন্টিলেশন (বায়ু চলাচল) এবং প্রাকৃতিক আলো: ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে রোধ করতে, গন্ধ কমাতে এবং যিনি ব্যবহার করছেন তিনি যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তার জন্য শৌচাগারের (টয়লেট) ডিজাইনে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক আলো থাকা উচিত।
বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শৌচাগারের (টয়লেট) থেকে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থায়ী শৌচাগারের (টয়লেট) ডিজাইনের মূল নীতি এবং বৈশিষ্ট্য
এই সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করার জন্য, স্থায়ী শৌচাগারগুলোকে (টয়লেট) নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং নীতি মেনে ডিজাইন করা উচিত। ডিজাইনের কিছু প্রধান নীতি যা বিশ্বব্যাপী ভালোভাবে কাজ করেছে সেগুলো হলো:
ভারতে, বর্ষা-প্রবণ এলাকাতে সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য বেশ কিছু স্থায়ী শৌচাগারের (টয়লেট) মডেল ও প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ইকোস্যান টয়লেট: এই টয়লেটগুলো (পায়খানা-বাথরুম) একটা টেকসই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রস্রাব এবং মলকে আলাদা করে আর সেগুলোকে সারের মতো মূল্যবান সম্পদে রূপান্তরিত করে। এগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এগুলো বন্যাকে প্রতিরোধ করতে পারে আর এগুলোকে বিহারের মতো বন্যা প্রবণ এলাকায় তৈরি করা হয়েছে।
সুলভ ইন্টারন্যাশনালস টয়লেট মডেল: সুলভ ইন্টারন্যাশনাল, ভারতের একটা সামাজিক সংস্থা, বন্যা-প্রতিরোধকারী এবং বর্ষা-প্রবণ অঞ্চলের জন্য উপযোগী এমন ধরণের বিভিন্ন টয়লেটের মডেল তৈরি ও বাস্তবায়ন করেছে। এই মডেলগুলোর মধ্যে রয়েছে এমন ধরণের শৌচাগার (টয়লেট) যা উঁচু করে শক্তিশালী নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ওড়িশা হলো এমন একটা রাজ্য যা প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার সম্মুখীন হয়, সেখানে স্বধা (Svadha) নামক একটা সামাজিক উদ্যোগ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যারা গ্রামীণ পরিবারের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করে দেয়। উদ্যোক্তারা গ্রাহকদের চাহিদা এবং পছন্দগুলোকে বোঝার জন্য সমীক্ষা করেন আর তাঁদেরকে বিভিন্ন ধরণের শৌচাগারের (টয়লেট) ডিজাইন, রঙ, উপকরণ এবং বৈশিষ্ট্যগুলো দেখান যার মধ্যে থেকে তাঁরা বেছে নিতে পারবেন।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা
স্যানিটেশনের সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য সচেতনতা বাড়ানো আর স্থায়ী পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বচ্ছ ভারত মিশনকে বাদ দিয়েও, NGO এবং কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা একটা প্রগতিশীল ইকোসিস্টেম তৈরি করার জন্য একত্রে কাজ করে চলেছে যা এমন একটা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান তৈরি করতে সাহায্য করবে যেটা আমাদের পরিবর্তন হওয়া জলবায়ুর সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবে। এই ইট ও মর্টার টয়লেটগুলো আসল পরিবর্তনের জন্য বিশেষ করে যখন মনোভাব এবং মানসিকতার পরিবর্তন আসে তখন আসল ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
একটা উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা যা এই ধরণের পরিবর্তনের সূচনা করে সেটা হলো মিশন স্বচ্ছতা অর পানি, যেখানে হারপিক এবং নিউজ 18 একত্রিত হয়ে টয়লেট ব্যবহার করার কারণকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যা লিঙ্গ, যোগ্যতা, বর্ণ এবং শ্রেণীর ভিত্তিতে কোনরকম বৈষম্য করে না এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে টয়লেট (পায়খানা-বাথরুম) পরিষ্কার রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।
সবার ওপর যাতে তাদের সর্বোচ্চ প্রভাব পড়ে তার জন্য হারপিক ওয়াটারএইড ইন্ডিয়া, সুলভ ইন্টারন্যাশনাল, অক্ষয় পাত্র ফাউন্ডেশন, সংহিতা সোশ্যাল ভেঞ্চারস এবং অন্যান্যদের মতো সম্মানিত সংস্থাগুলির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে৷ এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা স্কুল, কলেজ, রেলওয়ে স্টেশন এবং পাবলিক জায়গায় লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সুবিধা সহ সম্পূর্ণ ভারত জুড়ে টয়লেট তৈরি করার এবং টয়লেটের সংস্কারের উপর লক্ষ্য রেখে এগিয়ে চলেছে। মিশন স্বচ্ছতা অর পানি কার্যকরভাবে সবার জন্য টয়লেটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মিডিয়া চ্যানেল ব্যবহার করছে। এই বহুমুখী পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে, প্রচার করার লক্ষ্য হলো মানুষের সাথে আন্তরিকভাবে মিশে গিয়ে তাঁদেরকে অনুরোধ করে স্যানিটেশন আর স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
সকলের জন্য পরিষ্কার ও নিরাপদ টয়লেটের মানে হলো মানুষ স্বাস্থ্যকর থাকবে, আমাদের শিশুরা স্কুলে বেশি সময় কাটাবে এবং কম অসুস্থ হবে, মেয়েরা স্কুল ছেড়ে যাবে না, আমাদের কাজের জায়গাগুলো আরো বৈচিত্র্যময় জায়গা হয়ে উঠবে আর আমাদের শহর আরো পরিষ্কার, নিরাপদ হয়ে উঠবে এবং সবাইকে স্বাগত জানাবে।
এটা একটা ভীষণ কঠিন কাজ, তবে এটা এমন একটা কাজ যা আমাদের অবশ্যই সহানুভূতি এবং সংকল্পের সাথে করে যেতে হবে। বর্ষাকালের পরিস্থিতির জন্য স্থায়ী টয়লেট তৈরি করার মাধ্যমে, আমরা অগণিত ব্যক্তির জীবনে একটা বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারি, তাঁদের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারি এবং তাঁদের সম্মানকে ফিরিয়ে দিতে পারি। আসুন আমরা প্রকৃতির ক্রোধের সম্মুখীন হয়েও সকলের জন্য নিরাপদ এবং সম্মানজনক স্যানিটেশন তৈরি করার প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ হই।
আপনি কিভাবে আপনার কাজ করতে পারবেন সেটা জানতে আমাদের সাথে এখানে যোগ দিন।