গত ৪ ডিসেম্বর নিজের স্বামী বিনোদ এবং তিন বোন অনিতা, সরোজ এবং কমলার সঙ্গে গোয়া বেড়াতে যান ভাবনা৷ বাগার একচি হোটেলে উঠেছিলেন তাঁরা৷ রবিবার রাতে আরপোরা এলাকায় বির্চ বাই রোমিও লেন নামে ওই অভিশপ্ত নাইটক্লাবে সময় কাটাতে যান৷
ভাবনা সহ পাঁচজন শনিবার গোয়ার ওই নাইট ক্লাবে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই সেখানে আগুন লাগে৷নাইট ক্লাবের ভিতরে দ্রুত কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়৷ বিপদ বুঝেই দ্রুত ভাবনাকে নাইট ক্লাবের একটি গেট দিয়ে বাইরে বের করে দেন তাঁর স্বামী বিনোদ৷
advertisement
ধোঁয়ায় ততক্ষণে ভাবনারও দমবন্ধ হয়ে আসার অবস্থা, শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্ট৷ বাইরে বেরিয়ে পিছনে ঘুরে তাকাতেই তিনি দেখেন পিছনে তাঁর স্বামী বিনোদ নেই৷ কারণ নিজের তিন শ্যালিকাকে উদ্ধার করতে ফের নাইটক্লাবের ভিতরে ফিরে যান বিনোদ৷ কিন্তু ততক্ষণে আগুন গোটা নাইট ক্লাবকে গ্রাস করেছে৷ আর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি বিনোদ এবং ভাবনার তিন বোন৷
উদ্বিগ্ন ভাবনা বার বার বিনোদকে ফোন করতে থাকেন৷ মোবাইল বেজে গেলেও সেই ফোন কেউ তোলেনি৷ জ্বলতে থাকা নাইট ক্লাবের বাইরে নিজের স্বামী এবং বোনেদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন ভাবনা৷ শেষ পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর যখন একে একে আগুনে ঝলসে যাওয়া দেহগুলি বার করা হচ্ছে, তখনই ভাবনার সামনে দিয়ে বের করে নিয়ে আসা হয় বিনোদ এবং ভাবনার তিন বোনের দেহও৷ যদিও পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে থাকায় দূর থেকেই এই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকেন ভাবনা৷
একা, অসহায় ভাবনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন হোটেলের কর্মী সহ বরাতজোরে বেঁচে যাওয়া অন্যান্যরা৷ কোনওমতে নিজের পরিবারকে এই দুঃসংবাদ জানান ভাবনা৷ দ্রুত গোয়ায় পৌঁছন ভাবনার আত্মীয়রা৷ স্বামী এবং তিন বোনকে হারিয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই ভাবনা৷ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এখনও সবকিছু বলা হয়নি ভাবনা এবং বিনোদের সন্তানদের৷ তাদের দিল্লিতে রেখেই গোয়ায় এসেছিলেন ভাবনা এবং বিনোদ৷ ভাবনা এবং বিনোদের সন্তানদের শুধু বলা হয়েছে, দু জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দু জন এখনও নিখোঁজ৷
শনিবার রাতে গোয়ার ওই নাইট ক্লাবে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে৷ মৃতদের মধ্যে কুড়ি জনই ওই নাইট ক্লাবের কর্মী৷ বাকি পাঁচ জনের মধ্যে বিনোদ এবং ভাবনার তিন বোন অনিতা, কমল এবং সরোজ রয়েছেন৷ পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে শুধুমাত্র অনিতা এবং কমলার দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷ বাকি দেহগুলি এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে যে সেগুলি শনাক্ত করাও কঠিন৷
তিন বোনের মধ্যে কমলাই ছিলেন সবথেকে বড়৷ বিনোদের দাদা পেশায় ব্যবসায়ী নবীনের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল কমলার৷ তাঁদের দুটি সন্তানও রয়েছে৷ বিনোদ এবং ভাবনারও দুটি সন্তান৷ ফলে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছারখার হয়ে গেল ভাবনার শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ির দিকের দুই পরিবারই!
