পুলিশ জানিয়েছে মঙ্গলবার মধ্য দিল্লির রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে মরণঝাঁপ দেয় সেন্ট কলম্বাস স্কুলের ছাত্র শৌর্য। তার স্কুলব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ‘সুইসাইড নোটে’ তার এই চরম পরিণতির জন্য তিন স্কুলশিক্ষককে দায়ী করা হয়েছে। “আমরা যখনই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করতাম, তারা এই বলে তা উড়িয়ে দিত যে আমার ছেলের ক্লাস চলাকালীন মনোযোগ দেওয়া উচিত। তারা বলত যে তার গণিতে ভাল নম্বর নেই এবং সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পছন্দ করে না৷” মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় শৌর্যর৷ তার বাবার কথায়, “শৌর্য তখন ছোট ছিল এবং তার বয়সি বাচ্চাদের হয়তো বিভ্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে কিন্তু তার প্রতি শিক্ষকদের আচরণকে সমর্থন করে না। পরে যখন আমরা আবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তারা তাকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) দেওয়ারও হুমকি দেয়,” তিনি আরও বলেন।
advertisement
শৌর্যের বন্ধুরা প্রদীপকে জানিয়েছে যে, যেদিন সে আত্মহত্যা করেছিল, সেদিন স্কুলে মঞ্চে নৃত্য অনুশীলনের সময় সে পড়ে গিয়েছিল। “শিক্ষকরা তাকে নাচ থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন যে সে ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে গিয়েছিল। তাঁরা তার বিরুদ্ধে নাটক করা এবং অতিরিক্ত অভিনয় করার অভিযোগও এনেছিলেন,” তিনি বলেন। “একজন শিক্ষক তাকে বলেছিলেন ‘যত ইচ্ছা কাঁদো, তাতে আমার কিছু যায় আসে না’। স্কুলের অধ্যক্ষও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তিনি হস্তক্ষেপ করেননি,” প্রদীপের আরও সংযোজন।
তিনি বলেন, তার ছেলেকে সাধারণত স্কুল থেকে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয় কিন্তু সেদিন সে ক্যাম্পাস থেকে পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে মেট্রো স্টেশনে আত্মহত্যা করার জন্য যায়। প্রদীপ আরও অভিযোগ করেছেন যে, তার ছেলেকে একজন শিক্ষক চার দিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছেন। শিক্ষক তাকে বলেছিলেন যে তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠানো হবে এবং তাকে টিসি দেওয়া হবে, তিনি অভিযোগ করেন।” আর একজন শিক্ষক একবার আমার ছেলেকে ধাক্কাও দিয়েছিলেন।” “আমার ছেলে আত্মহত্যা করার পর, অধ্যক্ষ আমাকে ফোন করে বলেন, ‘তোমার যে কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমাদের জানাও, আমরা তোমাকে সাহায্য করব’। আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই,” তিনি আরও বলেন।
মেট্রো স্টেশনে তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা সুইসাইড নোটে শৌর্য বলেছেন যে “বারবার হয়রানির” কারণে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। “আমার বাবা-মা অনেক কিছু করেছেন। আমি দুঃখিত যে আমি তাদের কিছুই দিতে পারিনি,” তিনি বলেন। সে তার দাদার সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং তার মায়ের হৃদয় বার বার চূর্ণ করার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। তার কথায়, আত্মহননের মধ্যে দিয়ে সে শেষ বারের মতো হৃদয় ভঙ্গ করছে৷
সুইসাইড নোট
ছেলেটির ব্যাগে পাওয়া একটি সুইসাইড নোটে আর্জি রাখা হয়েছে, সেই চিঠি যে পাবে তাঁকে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করতে হবে৷ এর পর সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে বলে, যদি সেগুলো “কাজ করার মতো অবস্থায়” থাকে। “যদি আমার শরীরের কোন অংশ কাজ করে বা কাজ করার মতো অবস্থায় থাকে, তাহলে দয়া করে এটি এমন কাউকে দান করুন যার সত্যিই এটির প্রয়োজন,” আত্মঘাতী কিশোর লিখে গিয়েছে সুইসাইড নোটে।
আরও পড়ুন : ক্লাস ১০ -এর ছাত্র, শেষ চিঠিতে লিখল, ‘সরি মা..,’ শিক্ষকদের দুষে নিল চরম সিদ্ধান্ত
অধ্যক্ষ এবং দুই শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে সে বলে, তার শেষ ইচ্ছা হল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক যাতে অন্য কোনও ছাত্র বাধ্য হয়ে আত্মহনন না করে। ছেলেটি তার ২০ বছর বয়সি দাদার কাছে ক্ষমা চায়, তার সঙ্গে অভদ্র আচরণের জন্য৷ এবং তার বাবার কাছে ক্ষমা চায় তাঁর মতো ভাল মানুষ হতে পারেনি বলে। মাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সব সময় তার পাশে থাকার কথা মনে রেখে৷ মায়ের কাছে তার শেষ অনুরোধ, বাবা আর দাদাকে দেখে রাখার জন্য৷
If you or someone you know needs help, call any of these helplines: Aasra (Mumbai) 022-27546669, Sneha (Chennai) 044-24640050, Sumaitri (Delhi) 011-23389090, Cooj (Goa) 0832- 2252525, Jeevan (Jamshedpur) 065-76453841, Pratheeksha (Kochi) 048-42448830, Maithri (Kochi) 0484-2540530, Roshni (Hyderabad) 040-66202000, Lifeline 033-64643267 (Kolkata)
