দেশের রাজধানী শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বিবেচনা করে এই দিন কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএকিউএম)-এর নির্দেশে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (জিআরএপি)-এর তৃতীয় পর্যায় লাগু করা হয়।
আর জিআরএপি-৩ কার্যকর করা হয়, তখন শহরে নানা বিধিনিষেধ লাগু হয়ে যায়। যার জেরে ইতিমধ্যেই নির্মাণ এবং ভাঙাভাঙির কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় খননকার্যও স্থগিত করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, নন-ইলেকট্রিক, নন-সিএনজি এবং নন-বিএস-৬ ডিজেল ইন্টারস্টেট বাসের সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে।
advertisement
একিউআই ৪১৩:
শুক্রবার সামগ্রিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই ৪০৯-এ পৌঁছে গিয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবারের তুলনায় একিউআই-এ কিছুটা হলেও উন্নতি দেখা গিয়েছে। কারণ সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (সিপিসিবি)-র তরফে জানানো হয়েছে যে, বৃহস্পতিবার রাজধানী শহরের একিউআই পৌঁছে গিয়েছিল ৪৩২।
দিল্লির ৩৯টি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ২১টি মনিটরিং স্টেশন থেকে দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা সিভিয়ার বা গুরুতর বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি মনিটরিং স্টেশন থেকে তো বায়ুদূষণের মাত্রা সিভিয়ার প্লাস বলে জানানো হয়েছে। আনন্দ বিহারে ৪৪১, নারেলায় ৪২৯, পঞ্জাব বাগে ৪৪৩ এবং নজফগড়ে ৪০৩-এ রেকর্ড করা হয়েছে একিউআই।
এরই মাঝে এক উদ্বেগজনক তথ্য জানানো হয়েছে সিপিসিবি-র তরফে। সিপিসিবি সূত্রে জানানো হয়েছে যে, ৪০১ থেকে ৫০০-র মধ্যে একিউআই থাকলে অর্থাৎ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ‘সিভিয়ার’ লেভেলে চলে গেলে তা সকলের জন্যই অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যার জেরে সুস্থ মানুষদের পর্যন্ত শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর যাঁদের আগে থেকেই হার্ট অথবা ফুসফুসের রোগ রয়েছে, তাঁদের তো গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দিতেই পারে বলে আশঙ্কা।
নয়াদিল্লিতে দূষণের মাত্রা যেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেখে বৃহস্পতিবারই পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই একটি রিভিউ মিটিং ডেকেছিলেন। পরিবেশ মন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে যে, বৃহস্পতিবার দিল্লি সেক্রেটারিয়েটের গ্রিন ওয়ার রুমে সমস্ত বিভাগীয় আধিকারিকদের সঙ্গে ওই বৈঠক করেছেন পরিবেশ মন্ত্রী।
ট্রেন এবং উড়ান চলাচলে প্রভাব:
দেশের রাজধানী শহর এবং তার সংলগ্ন অঞ্চল ধোঁয়াশার মোটা চাদরে মুড়ে যাওয়ায় কম দৃশ্যমানতার জেরে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচলও। শুক্রবারও দেখা গেল সেই একই চিত্র। ঘন ধোঁয়াশার কারণে একাধিক ট্রেন এবং উড়ান চলাচলে দেরি হয়ে যাচ্ছে। রেলের আধিকারিকরা বলেন যে, এই দিন নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনগামী ১৫টি ট্রেন ঢুকতে দেরি হচ্ছে। প্রায় ১ ঘণ্টা অথবা তারও বেশি দেরিতে চলছে ট্রেনগুলি।
এখানেই শেষ নয়, আধিকারিকরা এ-ও জানান যে, এহেন আবহাওয়া এবং প্রতিকূল দৃশ্যমানতার কারণে দিল্লি, বারাণসী আর অমৃতসর থেকে আগত উড়ান এবং এই সমস্ত শহরগামী উড়ানের চলাচলে প্রভাব পড়েছে।
দিল্লিতে দূষণের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ:
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১৪ দিন ধরে নয়াদিল্লির বাতাসের মান বা এয়ার কোয়ালিটি ছিল ভেরি পুওর খুবই খারাপ। আর এই দূষণের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় অবদান রয়েছে গাড়ির ধোঁয়ার। রাজধানী শহরের বায়ুদূষণের মধ্যে ১৫.৪ শতাংশই আসছে গাড়ির ধোঁয়া থেকে।
এখানেই শেষ নয়, ফসলের আগাছা পোড়ানোও দিল্লির ঘন ধোঁয়াশার জন্য দায়ী। আসলে দিল্লির আশপাশের রাজ্যগুলিতে প্রতি বছরই এই সময় ফসলের আগাছা পোড়ানো হয়। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে দিল্লির বাতাসের উপরেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, পড়শি রাজ্যগুলিতে ফসলের আগাছা পোড়ানোর জন্যই রাজধানীর বাতাস ধোঁয়াশায় ঢেকে যায়। মূল দূষণকারী পদার্থ PM2.5 এবং PM10-এর মাত্রা এখানকার বাতাসে অনেকটাই বেশি ছিল।
মিনিস্ট্রি অফ আর্থ সায়েন্সেসের অধীনে থাকা এয়ার কোয়ালিটি ওয়ার্নিং সিস্টেম সতর্ক করে জানিয়েছে যে, দূষণকারী পদার্থের কার্যকর বিচ্ছুরণের জন্য বাতাসের ধীর গতির পাশাপাশি আবহাওয়া সংক্রান্ত অবস্থা অত্যন্ত প্রতিকূল থাকবে।