গত কালই হাওড়ার অনতিদূরে শালিমার স্টেশন থেকে রওনা দিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বহঙ্গ বাজারের কাছে লাইন থেকে ছিটকে যায় চেন্নাইগামী করমণ্ডলের বেশ কয়েকটি কামরা। ওই ট্রেনেই ছিলেন অনুভবও। ট্যুইট করে ঘটনার কথা শেয়ার করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, শুধু করমণ্ডলই নয়, এখানে মোট ৩টি ট্রেনের ক্ষতি হয়েছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ১২৮৪১, যশবন্তপুর-হাওড়া এসএফ এবং মালগাড়ি।
advertisement
আরও পড়ুন: করমণ্ডলের দুর্ঘটনায় আহতদের আনা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কোন হাসপাতালে? জানা গেল অবশেষে
প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল যে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে মালগাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল। মালগাড়িটি পাশের লুপ ট্র্যাকে দাঁড় করানো ছিল। কিন্তু পরে জানা যায় যে, নিকটবর্তী লাইন ধরে ছুটে আসা যশবন্তপুর এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারে করমণ্ডলের লাইনচ্যুত বগিগুলি। যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের তিনটি জেনারেল কামরা লাইনচ্যুত এবং সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর করমণ্ডলের প্রায় ১৩টি কোচ সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জেনারেল, স্লিপার, এসি ৩ টিয়ার এবং এসি ২ টিয়ারও।
আরও পড়ুন: করমণ্ডলের ভয়াবহ দুর্ঘটনার জেরে বাতিল কোন কোন ট্রেন ? দেখে নিন
এহেন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে একেবারে কাছ থেকে দেখেছেন অনুভব নামের ওই যাত্রী। দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ, অ্যাম্বুলেস পরিষেবা এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। আমি নিরাপদে বাড়ি পৌঁছেছি। সকলকে ধন্যবাদ।” তবে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে উঠছেন অনুভব। তাঁর কথায়, “একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আমি দু’শো থেকে আড়াইশোরও বেশি মৃতদেহ দেখেছি। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হাত-পা, পরিবারের হাহাকার আর রেললাইনের উপর রক্তের বন্যা – এটা কখনওই ভুলতে পারব না। ভগবান সহায় হোন। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।”
ভোরের আলো ফুটতেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন উদ্ধারকারী এবং দমকলকর্মীরা। রীতিমতো গ্যাস কাটার দিয়ে দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ফলে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন বালেশ্বরের স্থানীয় বাসিন্দারা। আবার আহতদের রক্ত দেওয়ার ভিড়ও চোখে পড়ল বালেশ্বরে। অনেকেই বলছেন, কিছু কিছু জায়গায় অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না!
পশ্চিমবঙ্গের চন্দ্রকোনার কয়েক জন শ্রমিককে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। নিউজ ১৮ জানাচ্ছে, চেন্নাইয়ে রঙের কাজ করেন নিতাই দোলুই, কার্তিক দোলুই এবং শীতল দোলুই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনেই ছিলেন তাঁরা। আবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বাসিন্দা পীযূষ পোদ্দার করমণ্ডলে চেপে তামিলনাড়ু যাচ্ছিলেন কাজে যোগ দিতে। তাঁর কথায়, জোর ঝাঁকুনি লাগে। আচমকাই দেখি ট্রেনের বগি কাত হয়ে উল্টে পড়ে রয়েছে। আমার মতো অনেকেই দুর্ঘটনার প্রতিঘাতে কামরার বাইরে ছিটকে গিয়ে পড়েন। কোনও রকমে বেরিয়ে এসে দেখি চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে রক্তাক্ত দেহ।
দুর্ঘটনায় রক্ষা পেয়েছেন রূপম বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা কোমর বেঁধে আমাদের সাহায্য করতে নেমেছিলেন। শুধু আমাদের টেনে বার করাই নয়, আমাদের মালপত্রও বার করে আনতে সাহায্য করেছিলেন। এমনকী জলও এগিয়ে দিয়েছিলেন।”