বালাঘাট জেলার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের আসল নাম ওয়াং চি৷ স্থানীয়রা তাঁকে চেনেন রাজ বাহাদুর নামে৷ বালাঘাটে নিজের পরিবারও রয়েছে ওয়াং চি-র৷ অনেকদিন আগেই ওয়াং চি-র ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে৷ এতদিন বিষয়টি নিয়ে সেভাবে নাড়াচাড়া হয়নি৷ কিন্তু ভারত-পাক সীমান্ত উত্তেজনার পরই ভারতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের চিহ্নিত করতে প্রশাসনিক তৎপরতা বেড়েছে৷ ফলে যে কোনও ওয়াং চি-কে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে, এমনই আশঙ্কা করছে তাঁর পরিবার৷
advertisement
ওয়াং চি-র পুত্র বিষ্ণু জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেই ভিসা পুনর্নবীকরণের জন্য তাঁর বাবাকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ওই বৃদ্ধকে ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়েও দেখা করতে বলা হয়েছে৷ এর আগে কোনওদিনই ওয়াং চি-কে ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে৷ ফলে ওয়াং চি-কে বিতাড়িত করা হতে পারে, এই আশঙ্কা বাড়ছে৷
চিনা সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ওয়াং চি৷ ১৯৬৩ সালের ৫ জানুয়ারি অরুণাচল প্রদেশে ভুলবশত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়ার পর ভারতীয় সেনার হাতে বন্দি হন তিনি৷ চিনের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয় ওয়াং চি-র বিরুদ্ধে৷ আট বছর ভারতের জেলে বন্দি থাকেন তিনি৷
এর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আর দেশে ফেরেননি ওয়াং চি৷ ভারতেই থেকে যান তিনি৷ মধ্যপ্রদেশের বালাঘাটের তিরোদি গ্রামে থাকতে শুরু করেন ওয়াং চি৷ তাঁর নাম হয় রাজ বাহাদুর৷ স্থানীয় এক আদিবাসী মহিলাকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন চিনা সেনার ওই প্রাক্তন সদস্য৷
ওয়াং চি-র ছেলে জানিয়েছেন, এর আগে কোনওদিনই দীর্ঘমেয়াদি ভিসার আবেদন করেননি ওয়াং চি৷ তার উপর প্রত্যেক চার বছর অন্তর ভিসার পুনর্নবীকরণ করতে ১৫ হাজার টাকা লাগে৷ যেহেতু ওয়াং চি-র পরিবারের আর্থিক অবস্থা যথেষ্টই খারাপ, তাই চার বছর অন্তর এই টাকা জোগাড় করাও তাঁদের পক্ষে কষ্টকর বলে জানিয়েছেন ওয়াং চি-র ছেলে৷ তাঁদের আশা, এবার যদি ওয়াং চিকে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা দেওয়া হয়, তাহলে জীবনের শেষ কয়েকটা বছর ভারতে নিজের পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে পারবেন চিনা সেনার প্রাক্তন ওই সদস্য৷
তার উপর ওয়াং চি বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তাঁর নাতি, নাতনিদের জাতি শংসাপত্র দিতেও অস্বীকার করছে স্থানীয় প্রশাসন৷ ফলে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছে ওয়াং চি-র পরিবার৷