১০০ বছর ধরে বহু গবেষণা, তর্ক বিতর্ক। অবশেষে খোঁজ মিলল তাঁর। ধরা দিল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। এর খোঁজ পাওয়ার পরই বোঝা গেল, একেবারে সঠিক ছিলেন আইনস্টাইন। কণা সৃষ্টির ইতিহাস থেকে জীবনের স্পন্দন - ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি আবিস্কারের খোঁজ দিয়েছিলেন তিনি। হিগস বোসন কনা কিংবা ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব নিয়েও ১০০ শতাংশ নিখুঁত ছিল ইহুদী বিজ্ঞানীর তত্ত্ব। কণার সৃষ্টি থেকে তাঁর ধ্বংস - সবটাই নিজের তত্ত্বে নিখুঁত তুলে ধরেছিলেন তিনি।
advertisement
কেন আইনস্টাইন ঠিক এবং নিউটন ভুল ছিলেন ?
নিউটনের মতে , মহাকর্ষ হল দুটি বস্তুর মধ্যে অদৃশ্য টান ৷ তাঁর তত্ত্বে তরঙ্গের অস্তিত্ব নেই ৷ আইনস্টাইনের মতে, মহাকর্ষ কোনও টানাটানি নয়, স্রেফ স্পেসের কাঠামো বদল ৷ তাই বস্তু নড়াচড়া করলে কাঠামো কাঁপবেই ৷ নিউটন মহাকর্ষ-তরঙ্গের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেননি, আইনস্টাইন পেরেছিলেন ৷
মহাকর্ষীয় তরঙ্গই এতদিন নীরবে লিখে গিয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস। মহাকাশে বা ব্রহ্মাণ্ডে কোনও কিছু ধ্বংস হলে নিউট্রন, ব্ল্যাক হোল বা ভারী কিছু সৃষ্টি হতে পারে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব বলছে, ধ্বংস হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার পুর্নবণ্টন হয়। এতে তার আশেপাশের মহাকর্ষ অনেকটাই বদলে যায়।
মহাবিশ্বে ধ্বংসের পর যখন নতুন করে ওই জায়গা থেকে কিছু তৈরি হয়, তখন ভরের পরিবর্তনের ফলে তারা আশপাশের সবকিছুকে বিকৃত করে দেয়। তা থেকেও তৈরি হয় নতুন কিছু। ব্ল্যাকহোলের মধ্যে মাধ্যাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি হলে ব্ল্যাক হোল আর তারাদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।
এই আবিস্কার থেকে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সময় তার স্বরূপ স্পষ্ট হবে। একের পর এক ধ্বংসের পর কীভাবে নতুন করে মহাকর্ষে সেখানে নতুন কিছুর জন্ম হল, তা স্পষ্ট হবে। মহাশূন্যে শব্দ শোনা যায় না বলে আমরা ধ্বংসের শব্দ শুনতে পাই না। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সেই অভাব পুষিয়ে দেবে। প্রাণের অস্তিত্ব, ব্রহ্মাণ্ডে নতুন কণার জন্ম - সবকিছুই স্পষ্ট হবে ৷
বিশ্বজুড়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের উল্লাসের ভাগীদার এদিন হলেন ভারতীয় গবেষকেরাও। পরোক্ষে নয়, প্রত্যক্ষ ভাবে। ওয়াশিংটনের ওই সাংবাদিক বৈঠক সরাসরি দেখানো হয়েছে এদেশের ‘ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আইইউসিএএ)’-র চন্দ্রশেখর অডিটোরিয়ামে। ওয়াশিংটনে ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই দিল্লি থেকে ট্যুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্ববিজ্ঞানের ওই সাফল্যকে অভিনন্দন তো জানালেন। সঙ্গে সঙ্গেও এ-ও বললেন, ‘‘এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা যুক্ত ছিলেন। এটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আশা করি, মহাকর্ষ-তরঙ্গ শনাক্ত করার জন্য উন্নতমানের যন্ত্র বানিয়ে এই কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন আমাদের বিজ্ঞানীরা।’’