গত ১৭ জুলাই থেকে একমাসের মধ্যে এই নিয়ে চতুর্থ বার কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেন নীতিশ কুমার৷ জোট সঙ্গী বিজেপি-র প্রতি নীতিশ ক্ষুব্ধ বলে তখন থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে৷ রবিবারের পর সেই জল্পনাই চরমে পৌঁছেছে৷ অনেকেই মনে করছেন, জেডিইউ- বিজেপি বিচ্ছেদ এখন সময়ের অপেক্ষা৷
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কেন রবিবারের বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি৷ তবে সূত্রের খবর, করোনা সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে বৈঠকে গরহাজির ছিলেন তিনি৷ গত ২৫ জুলাই তাঁর কোভিড ধরা পড়েছিল৷ বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, রবিবারই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধিকে ফোন করেন নীতিশ৷
advertisement
গত মাসেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি নীতিশ৷ তার আগে, গত ১৭ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক এড়িয়ে যান তিনি৷ তার বদলে ওই বৈঠকে উপমুখ্যমন্ত্রী তারকিশোর প্রসাদকে পাঠান তিনি৷ এর পরে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মানে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজেও যাননি নীতিশ৷
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মঙ্গলবার নিজের দলের সাংসদ, বিধায়ক এবং বিধান পরিষদের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন নীতিশ৷ যদিও, জেডিও নেতা কে সি ত্যাগির দাবি, এই বৈঠক নিয়ে এত চর্চার কিছু নেই৷ এটি রুটিন বৈঠক বলেই দাবি করেছেন জেডিইউ নেতা৷ জেডিইউ শীর্ষ সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, জোটসঙ্গী বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক এখনও বিচ্ছেদের জায়গায় যায়নি৷
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর সি পি সিং দু' দিন আগেই জেডিইউ থেকে পদত্যাগ করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এই সিনিয়র নেতার থেকে জবাবদিহি তলব করে জেডিইউ নেতৃত্ব৷ মঙ্গলবারের বৈঠকে নীতিশ কুমারের উপস্থিতিতে আর পি সিং-এর বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা৷
আরও পড়ুন: টার্গেট মহিলা ভোট, রাখির দিনে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি মহিলা তৃণমূলের
বিজেপি-র সঙ্গে জেডিইউ-এর সম্পর্কে যে বড়সড় সমস্যা তৈরি হয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিং-এর বক্তব্যেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ রবিবার তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কোনওভাবেই যোগ দেবে না জেডিইউ৷ ২০১৯-এ দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতেই অনড় রয়েছে বলে দাবি করেন জেডিইউ নেতা৷ একই সঙ্গে বিজেপি-র নাম করেই ২০২০ সালে বিহারে বিধানসভা ভোটে জেডিইউ-এর খারাপ ফলের পিছনে চক্রান্তের অভিযোগ সামনে আনেন রাজীব রঞ্জন৷ তাঁর অভিযোগ, ২০২০ সালে চিরাগ পাসোয়ান যে ভাবে জেডিইউ-এর কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই আরও একবার চিরাগ মডেল তৈরি করছে বিজেপি৷ এক্ষেত্রে আর সি পি সিং-কে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই ইঙ্গিত দেন তিনি৷
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে বিহারকে সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুড়ঘর হিসেবে তুলে ধরছে, তা নিয়েও তীব্র আপত্তি রয়েছে জেডিইউ-এর৷ ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পরে নীতিশ কুমার কোনওভাবেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদানের পক্ষে ছিলেন না৷
আর সি পি সিং-এর সঙ্গে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বরাবরই ভাল৷ কিন্তু গত কয়েকমাসে তাঁর সঙ্গে নীতিশ কুমারের দূরত্ব তৈরি হয়৷ গত বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নীতিশের সম্মতি ছাড়াই আর সি পি সিং মোদি মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন বলে দাবি জেডিইউ সূত্রের৷
এর পরে আর সি পি সিং-কে আর তৃতীয় বারের কোনও রাজ্যসভায় পাঠাতে রাজি হননি নীতিশ৷ সাংসদ পদ না থাকায় বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় রাজীব রঞ্জনকে৷ যার জেরে নীতিশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় রাজীবের৷