পটনা: নির্বাচনের সার্ভে করার এজেন্সি Vote Vibe (ভোট ভাইব) বিহার বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছে। ভোট ভাইব-এর এই সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বিহারের জনগণের মধ্যে সরকার বিরোধী হাওয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই সার্ভের তথ্য অনুযায়ী ৪৮% ভোটার বর্তমান শাসক জোটের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হল, পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে সমান ভাবে পরিবর্তনের দাবি সামনে এসেছে।
advertisement
সার্ভে এর দাবি অনুযায়ী, শহর এবং গ্রাম দুই জায়গাতেই পরিবর্তনের হাওয়া বইতে দেখা যাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই সমীক্ষা রাহুল গান্ধির ভোট অধিকার যাত্রার পর করা হয়েছে, যা বিহারের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিহারে নীতীশ কুমার দীর্ঘ সময় ধরে বিহারের রাজনীতির কেন্দ্রে ছিলেন, কিন্তু এই সমীক্ষা ‘নীতিশ ফ্যাক্টর‘-এর দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সমীক্ষার দাবি অনুযায়ী, রাহুল গান্ধি এবং তেজস্বী যাদবের যাত্রা জনগণের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে।
কিন্তু সার্ভেতে সরাসরি কোনও পার্টিকে ক্ষমতায় আসতে দেখা যাচ্ছে না। যুবক, মহিলা এবং গ্রামের ভোটাররা এখন বিকল্পের খোঁজ করছেন। ভোট ভাইব-এর সার্ভেতে ৫৬৩৫ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে পুরুষ এবং মহিলারা প্রায় সমান। সার্ভে এজেন্সির দাবি, জাতিগত এবং আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে মাথায় রেখে সার্ভে করা হয়েছে। এতে ৪৮% লোক স্পষ্ট ভাবে মেনে নিয়েছে, বিহারে এখন ক্ষমতা বিরোধী ঢেউ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সার্ভের তথ্য থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, বর্তমান সরকার মানুষের আশা পূর্ণ করতে পারেনি এবং জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের ইচ্ছে জেগে উঠেছে।
সমীক্ষায় ৪৮ শতাংশ সরকার বিরোধী মনোভাব পোষন করলেও ২৭.১% মানুষ সরকারের পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। এতেই স্পষ্ট হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া উঠলেও বড় সংখ্যায় জনগণের সমর্থন এখনও নীতীশ কুমারদের দিকেই আছে। তবে জনগণের যে অংশ সমীক্ষায় মুখ খোলেনি। তারা ভোটের ফলে বড় ফ্যাক্টর হয়ে যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই সূত্রেই বলে রাখা যাক, ২২% ভোটার তাদের কোনও মতামত প্রকাশ করেননি।
ভোট ভাইব-এর এই সার্ভের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, শহর এবং গ্রাম দুই জায়গাতেই সরকার বিরোধী মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে। প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ সরকারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। যদিও, শহরের ক্ষেত্রে যেখানে ৩১% মানুষ সরকার বিরোধী মনোভাব পোষন করছেন, গ্রামের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ২৫%। অর্থাৎ, এতে স্পষ্ট যে, গ্রামেও শাসক বিরোধী হাওয়া বইছে প্রবল ভাবে।
এদিকে, সমীক্ষায় ৪৮% পুরুষ এবং ৪৮% মহিলারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে, ২২% মহিলা কোনও মতামত জানানি, অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে ২০% এ বিষয়ে কোনও মত দেননি। এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, মহিলাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ছে এবং তারাও পরিবর্তনের দাবি করছেন। সার্ভের যে যে স্যাম্পলগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে, তাতে বিভিন্ন শ্রেণীর অংশগ্রহণ কতটা জানেন? পুরুষ ৫২% এবং মহিলারা ৪৮%। জাতি সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে তফসিলি জাতির ২০% মানুষের অংশগ্রহণ রয়েছে, অন্যদিকে তফসিলি উপজাতির ২ শতাংশ মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ৪৪% মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, উচ্চ বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে ১৬%-এর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আবার মুসলিমদের প্রায় ১৮%-এর অংশগ্রহণ ছিল।
সার্ভে থেকে স্পষ্ট যে, বিহারে জনগণের একটা বড় অংশ বিকল্প খুঁজছে। রাহুল গান্ধির ভোটার অধিকার যাত্রা কি কোনও প্রভাব ফেলবে? প্রসঙ্গত, এই সার্ভে রাহুল গান্ধির সম্প্রতি বিহারে হওয়া ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র পর করা হয়েছে। যদিও, এখনও স্পষ্ট না যে কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল এই যাত্রা থেকে সরাসরি লাভ তুলতে পারবে কিনা। কিন্তু শাসক বিরোধী আওয়াজকে তা আরও খানিকটা শক্তি দিচ্ছে। যুবক, মহিলারা এবং গ্রামের ভোটাররা এখন নতুন মুখ এবং বিকল্পের আওয়াজ তুলছেন। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এই সরকারের উপর ভরসা ক্রমশ কমছে মানুষের।