এই হরিণগুলিকে বনতারার এক্স-সিটু সংরক্ষণ থেকে জামনগরে আনা হয়েছিল। তারপর বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাদের বরদা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশ এবং সহায়ক ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিশ্চিত করার পরেই বন দফতরের তত্ত্বাবধানে হরিণগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠিত সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রোটোকল যাতে মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বনতারার তরফে প্রযুক্তিগত এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
advertisement
গ্রিনস জুওলজিক্যাল, রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার-এর ডিরেক্টর ড. ব্রজকিশোর গুপ্তা বলেন যে, বরদা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এমনিতে স্পটেড ডিয়ার বরাবরই এই ভূখণ্ডেই বসবাস করেছে। আর বৈজ্ঞানিক ভাবে নির্দেশিত তাদের পুনঃপ্রবর্তন কেবল পরিবেশগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণই নয়, সেই সঙ্গে তা তাদের আবাসস্থল পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক বটে! পরিবেশগত মূল্যায়ন, প্রজাতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা এবং ইন্টার-এজেন্সি কোল্যাবোরেশনের উপর ভিত্তি করে গুজরাত বন দফতরের সক্রিয় ও তৎপর দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য রাজ্য জুড়ে ইন-সিটু সংরক্ষণ কাঠামোকে আরও মজবুত করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতিই প্রদর্শন করছে। আর এই প্রয়াস সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বনতারার মতো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্টনারশিপের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার উপরেও জোর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে কাজ এবং সম্পদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার ফলে পরিমেয় সংরক্ষণ সংক্রান্ত ফলাফল আসতে পারে। সেই সঙ্গে ভারতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন মানদণ্ডও স্থাপিত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ১৯২.৩১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বরদা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি। গুজরাতের পোরবন্দর জেলায় অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। শুধু তা-ই নয়, বৈচিত্র্যময় ফুলের সমাহারের জন্যও এটি বিখ্যাত। সেই সঙ্গে এই অভয়ারণ্যটি বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলও হয়ে উঠেছে। রাজ্য সরকারি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, বরদা আসলে অ্যাপেক্স এবং মেসোপ্রিডেটরদের আবাসস্থল। এর মধ্যে অন্যতম হল – লেপার্ড, হায়না, নেকড়ে, শেয়াল এবং বুনো শুয়োর। এর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে তৃণভোজী প্রাণীদেরও এক শক্তিশালী সহাবস্থান। আর এই তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হল নীলগাই। এখানেই শেষ নয়, এই অভয়ারণ্যটি বিভিন্ন বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় পক্ষী প্রজাতিরও বাসস্থান হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল – স্পটেড ঈগল এবং ক্রেস্টেড হক-ঈগল। যা এটিকে বন-নির্ভর পাখিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল করে তোলে।
আরও পড়ুন : ‘প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই আমি ঈশ্বরকে দেখতে পাই’, বনতারা নিয়ে সাক্ষাৎকারে যা বললেন অনন্ত আম্বানি…
ঐতিহাসিক ভাবে এমনিতে সম্বর, চিতল এবং চিঙ্কারার ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে সমর্থন করেছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবাসস্থল ভেঙে যাওয়া এবং অন্যান্য পরিবেশগত চাপের কারণে সেই সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অভয়ারণ্যের অক্ষত আবাসস্থলের কাঠামো এবং পরিবেশগত বহন ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দিয়ে বন দফতর এই স্থানীয় প্রাণীগুলিকে পুনঃপ্রবর্তনের প্রয়াস শুরু করেছে। মূলত ট্রফিক ব্যালান্স পুনরুদ্ধার করা এবং একটি কার্যকরী সংরক্ষণ পটভূমি হিসাবে অভয়ারণ্যের ভূমিকাকে জোরদার করাই হল এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।