গতকাল দিল্লিতে সীমান্ত বিবাদ মেটাতে অসম এবং মেঘালয়ের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে৷ সেই অনুষ্ঠানেই এই দাবি তুলেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himant Biswa Sarma)৷ যার মূল অর্থ, দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অসমে কাজের সময় শুরু হবে অনেক আগে৷
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য বিরাট সুখবর, বাড়ছে ডিএ
advertisement
উত্তর পূর্বের রাজ্য হওয়ায় দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক আগে অসমে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত হয়৷ এই যুক্তি দেখিয়েই অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, অসমে পৃথক টাইম জোন মেনে চললে কাজের ক্ষেত্রেই সুবিধে হবে৷
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, 'আমাদের পৃথক টাইম জোন প্রয়োজন৷ যে সময় আমরা কাজ শুরু করি ততক্ষণে সূর্য মধ্য গগণে চলে যায়৷ ঘড়ির হিসেবে আমাদের অন্তত দু' ঘণ্টা এগিয়ে থাকা উচিত৷ একমাত্র তাহলে রাজ্যে বিদ্যুতের বিপুল সাশ্রয় যেমন সম্ভব, সেরকমই আমাদের শারীরিক দিক থেকেও তা উপকারী হবে৷ এখন যেভাবে চলছে, তাতে বাস্তবিক দিক দিয়ে আমাদের মাঝরাতেও কাজ করতে হয়৷ আলাদা টাইম জোন হলে শরীরের চাহিদা মেনেই আমরা কাজ করতে এবং ঘুমোতে পারব৷'
হিমন্ত বিশ্বশর্মা প্রথম নন, ২০১৪ সালে অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং ২০১৭ সালে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেম খান্ডুও একই দাবি তুলেছিলেন৷ তাঁদেরও যুক্তি ছিল, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে সূর্যোদয় হয় তাড়াতাড়ি৷ সেই তুলনায় অফিস কাছারি শুরু হয় অনেক দেরিতে৷ যে কারণে রাজ্যগুলির উৎপাদনশীলতাতেও প্রভাব পড়ে৷
আরও পড়ুন: কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা মিটিয়েছে বায়ু ও সৌরশক্তি
গগৈ দাবি করেছিলেন, দিনের আলোকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতেই অসমের জন্য পৃথক টাইম জোন প্রয়োজন৷ ব্রিটিশ শাসনকালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই কারণেই গোটা দেশকে তিনটি টাইম জোন- বম্বে, কলকাতা এবং বাগান টাইম জোনে ভাগ করেছিল ব্রিটিশরা৷
ব্রিটিশ শাসনকালে অসমের চা বাগানগুলিতে এই কারণেই দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক আগে কাজ শুরু করা হত৷ যাকে বলা হত বাগান টাইম৷ সূর্যোদয়ের সময়ের উপরে ভিত্তি করে যা ঠিক করা হত৷ বর্তমানে অসমে সরকারি অফিসগুলিতে সকালে সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ হয়৷
ভারতে ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম বা আইএসটি মেনে চলা হয়৷ যা গ্রিনউইচ মিন টাইমের থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এগিয়ে৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি, পশ্চিম এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে সূর্যোদয়ের সময় প্রায় আড়াই ঘণ্টার ফারাক থাকে৷ তবে যে যুক্তি সামনে আসুক না কেন, অতীতে বার বার এই দাবি উঠলেও দেশের মধ্যে পৃথক টাইম জোন মেনে চলার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷
একটি হিেসব বলছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অভিন্ন টাইম জোনের কারণে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি ২৫ বছরের সমান উৎপাদনশীলতা হারিয়েছে৷ একশো বছরে গোটা দেশের তুলনায় উৎপাদনশীলতার নিরিখে ৫৪ বছর পিছিয়ে পড়বে উত্তর পূর্ব ভারত৷
তবে ভারতে অভিন্ন টাইম জোন মানা হলেও ব্যতিক্রমী পথে হেঁটেছে বহু দেশ৷ ভারতের প্রতিবেশী এবং উত্তর পূর্বের লাগোয়া বাংলাদেশে নিজেদের ঘড়িকে দেড় ঘণ্টা এগিেয় নিয়েছে৷ রাশিয়া, কানাডা, আমেরিকাতেও একাধিক টাইম জোন রয়েছে৷ ফ্রান্সে ১২টি, আমেরিকায় ১১িট এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৮টি টাইম জোন রয়েছে৷