অসম: অসমে যত মানুষ বাংলায় কথা বলেন, তা দেখলেই বোঝা যাবে সে রাজ্যে কতজন বিদেশি রয়েছে৷ বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার এ হেন মন্তব্যের পরেই তৃণমূলের চাঁচাছোলা আক্রমণের মুখে পড়েছে বিজেপি৷ বাংলা বললেই কি সে বাংলাদেশি? বিজেপি কি বাঙালি এবং বাংলাদেশির মধ্যে পার্থক্য মুথে দিতে চাইছে, লাগাতার এমন প্রশ্ন তুলছে বঙ্গের শাসকদল৷ তার উপরে ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা হওয়ার ঘটনা বিষয়টি আরও গুরুতর আকার নিয়েছে৷ বাঙালি হেনস্থা ও বাঙালি নিগ্রহের অভিযোগ তুলে আজ, বুধবার প্রতিবাদে পথে নামছেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ থাকবেন অভিষেকও৷ হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্যের জেরে খানিকটা হলেও অস্বস্তিতে বিজেপি৷ এবার নিজের মন্তব্যের জন্য সাফাই গাইতে দেখা গেল হিমন্তকে৷
advertisement
পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, “এই বিদ্বেষের উৎস কোথায়? কেন এত ঘৃণা বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি? শুধুমাত্র এই কারণে, যে বাংলার মানুষ বিজেপি-কে প্রত্যাখ্যান করে অপমানিত করেছে?” হুঁশিয়ারির সুরে রাজ্যের শাসকদল বলেছে, “ঘৃণা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং বহিরাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে যদি বাংলাকে দখল করতে চায়, তবে আমাদের করুণা রইল। বাংলার মানুষ এবার আরও বেশি ভোটে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে।”
হিমন্ত বলেন, “অসম কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তৃণমূল যেভাবে আমার মন্তব্য বিকৃত করে আমাকে বাংলা বিরোধী হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে সেটা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আড়াল করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। এই অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি দেশের জনসংখ্যার কাঠামোকে বদলে ফেলতে পারে।” হিমন্তর দাবি, অসমে বসবাসকারী বাংলাভাষী-সহ প্রত্যেক ভারতীয় তাঁর সরকারের অবস্থান বোঝেন। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অসম সরকারের অবস্থানকে তাঁরা সমর্থনও করেন।”
তাঁর পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, অসমের নতুন এনআরসি তালিকায় ১২ লক্ষ কেন হিন্দু বাঙালি? বিজেপির বাংলা ও বাঙালিবিদ্বেষে অসমের একটা বড় ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বুঝতে সারবত্তাহীন সাফাই গেয়েছেন হিমন্ত। তাঁর সেই সাফাই যে আর একটা জুমলা, তা প্রমাণিত অসমের নতুন এনআরসি তালিকায়। সেখানে যে ১৯ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি। কেন ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি এনআরসি তালিকায়, প্রশ্ন তৃণমূলের। অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত হিন্দু বাঙালির সংখ্যা নিয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন। সম্প্রতি যেভাবে বিজেপি রাজ্যগুলিতে বাংলা বিরোধিতায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার ও পুশব্যাকের রাজনীতি শুরু হয়েছে তার থেকে এককাঠি এগিয়ে অসম।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা প্রকাশ্যে দাবি করেন, জনগণনার সময় ফর্মে মাতৃভাষার জায়গায় বাংলা লিখলেই বুঝতে হবে তারা বিদেশি। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেই বিপাকে পড়ে বিজেপি৷ এরপরেই তিনি ব্যাখ্যা দেন তাঁর বক্তব্যের৷ তাঁর মন্তব্য বিকৃতির অভিযোগও তোলেন। তবে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী বাংলার হিন্দুদের যেভাবে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের চিঠি পাঠিয়েছেন বা এনআরসির চিঠি ধরিয়েছেন, তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি হিমন্ত।
বাঙালিদের রোষের হাত থেকে বাঁচতে হিমন্তর প্রয়াসকে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল আইটি সেল ও সোশ্যাল মিডিয়া শাখার সভাপতি দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, হিমন্ত বিশ্বশর্মা দাবি করছেন তিনি বেআইনি বাংলাদেশিদের তাড়ানোর কাজ করছেন। তবে অসমে যে ফাইনাল এনআরসি তালিকা তৈরি হয়েছে তাতে যে ১৯.৬ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন তার মধ্যে ১২ লক্ষ বাঙালি হিন্দু কেন? এক্ষেত্রে কী তাঁদের সমস্যা, না ভাষা সমস্যাতেই তারা বাদ? আপনি দাবি করছেন আপনার ক্রুসেড বাঙালিদের বিরুদ্ধে নয়। তবে অসমের ডিটেনশন সেন্টারে যে মৃত্যু হয়েছে তাতে প্রতি ৩০ জনে ৪ জন বাঙালি কেন মারা গিয়েছেন। আপনার ট্র্যাক রেকর্ডই বলছে আপনার কাছে একটি মাপকাঠি রয়েছে, তা হল বাঙালি। এর সঙ্গে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্ক নেই। এখানে শুধুই একটি ভাষা, একটি জাতি ও একটি সংস্কৃতির প্রতি অস্বাভাবিক ঘৃণা রয়েছে আপনার।