আর চঞ্চুর এই চোটের কারণে ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয় পাখিটির জন্য। এমনকী চঞ্চুটিতে পচন পর্যন্ত ধরতে শুরু করেছিল। এক সময় লুনার চঞ্চু ছিল শক্ত। আর সেই অবস্থার ধীরে ধীরে অবনতি হয়। যার জেরে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত করতে পারছিল না লুনা। ফলে দ্রুত হারে ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে।
advertisement
লুনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ওয়াইল্ডলাইফ ভেটেরিনারি রেসকিউ টিম। এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে তারা। আর লুনাকে আটকে রেখে তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসে। পশু চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে জীবন পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয় লুনাকে।
অপারেটিং রুমের নরম আলোয় গ্যাস অ্যানাস্থেশিয়ায় রাখা হয় লুনাকে। দক্ষ পশু চিকিৎসকরা লুনার চঞ্চুর নেক্রোটিক পদার্থটি সরিয়ে ফেলে। সংক্রমণস্থল পরিষ্কার করে ক্ষত প্রতিরোধ করা হয়। এর পাশাপাশি লুনা যে সঠিক চিকিৎসা পেয়েছে, তা নিশ্চিত করতে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কালচারের জন্য একটা নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করার পরে লুনাকে কড়া নজরদারির আওতায় রাখতে হয়। সেই সঙ্গে তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবারও দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে নিজের শক্তি ফিরে পেতে থাকে লুনা। তার চঞ্চুও সেরে উঠতে থাকে। আর খুব শীঘ্রই ব্যথার উপশম হয়ে খাওয়াদাওয়া করতে শুরু করে সে।
অস্ত্রোপচারের পরে সময় যত এগোতে থাকে, লুনাও তত শক্তিশালী এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এক সময় তার চঞ্চু ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভঙ্গুর ছিল, সেটাই সুচিকিৎসার মাধ্যমে ভাল হয়ে যায়। আর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পরে ডানা মেলে জঙ্গলে উড়ে গিয়েছে লুনা। এখন তার মিষ্টি কলতানে ভরে যাচ্ছে জঙ্গলের আকাশ-বাতাস।
গত সোমবারই বনতারা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। এই অনন্য প্রোগ্রামের লক্ষ্য হল, দেশ-বিদেশের আহত, অত্যাচারিত এবং ঝুঁকির মুখে থাকা প্রাণীদের উদ্ধার, চিকিৎসা, যত্ন এবং পুনর্বাসন দেওয়া।
রিলায়েন্সের জামনগর রিফাইনারি কমপ্লেক্সের গ্রিন বেল্টের মধ্যে ৩০০০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের বোর্ডের ডিরেক্টর অনন্ত আম্বানির মস্তিষ্কপ্রসূত বনতারা। এর লক্ষ্য হল, বিশ্বব্যাপী সংরক্ষণ প্রয়াসের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান অবদানকারী হয়ে ওঠা। পশুদের যত্ন এবং কল্যাণের স্বার্থে প্রথম সারির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে ওয়ানতারা একটি বিস্তৃত ৩০০০ একর জায়গাকে একটি জঙ্গলের মতো পরিবেশে রূপান্তরিত করেছে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র, বৈজ্ঞানিক ভাবে ডিজাইন করা দিন ও রাতের এনক্লোজার, হাইড্রোথেরাপি পুল, জলাশয় এবং হাতিদের আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্য একটি বড় এলিফ্যান্ট জ্যাকুজি-সহ একটি হস্তী কেন্দ্রও রয়েছে।
প্রসঙ্গত বনতারা যেখানে অবস্থিত, সেই জামনগরেই আগামী ১ মার্চ থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বসতে চলেছে অনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের তিন দিন ব্যাপী প্রাক-বিবাহ উৎসবের আসর।