পরে ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২ সালে মারা যান নির্যাতিতা। তাঁর অপরিসীম সাহসের জন্য তাঁর নাম দেওয়া হয় নির্ভয়া। সারা ভারতে তখন নির্ভয়া জোয়ার এসেছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে মোমবাতি হাতে পথে নেমেছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা । ঘটনার ৬ অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ঋণ শোধ করতে না পারায় ধর্ষণ! পুলিশে অভিযোগ জানালে ছুরির কোপ নির্যাতিতাকে, গুজরাটের ঘটনায় চাঞ্চল্য
advertisement
অভিযুক্তদের মধ্যে একজন আবার নাবালকও ছিল । অভিযুক্তদের বিকৃত, কুরুচিকর মানসিকতা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সকলে । এই জঘন্য মামলার প্রভাবে দোষীদের শাস্তির দাবিতে সারা দেশ নামে রাজপথেএবং চাপে পড়ে সংশোধীত হয় ধর্ষণ আইন ।
নির্ভয়া ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ৪ আসামিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে মুক্তি পায় নাবালকটি। আইন সংশোধনের পরে আজও নিরাপদ নয় রাজধানী। ধর্ষণের ঘটনা কমেনি আজও। দিল্লি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে শহরে ধর্ষণের ৭০৬ টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়। যদিও আইনে পরিবর্তন আনার পরও বাস্তবতার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে দিল্লিতে।
আরও পড়ুন: ঝাড়ফুঁক করার নাম করে নাবালিকাকে নির্যাতন! হাড়হিম করা ঘটনায় তাজ্জব দেশ
নিউজ ১৮ দ্বারা বিশ্লেষণ করা দিল্লি পুলিশের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে প্রতিদিন প্রায় ৫টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয় রাজধানীতে। ২০২১ সালের গননা অনুযায়ী শহরে ২ হাজার ৭৬টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালের ছবিটিও প্রায়একই রকম। ১৫ জুলাই পর্যন্ত, এই বছর দিল্লিতে ১ হাজার ১০০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত নথিভুক্ত মামলার থেকে ১০৩৩টি বেশি ।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ভারতে ২৪ হাজার ৯২৩ টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। এটি ২০১১ সালের পরিসংখ্যানের অনুরূপ এবং ২০০৯ এবং ২০১০ সংখ্যার তুলনায় সামান্য বেশি।
আইনটি আরও কঠোর করতে ২০১৩ সালে সংশোধন করার পরেও একই ছবি লক্ষ্য করা যায় । সেই বছরই ভারতে ৩৩ হাজার ৭০৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সাল নাগাদ, এই সংখ্যাটি বেড়ে ৩৮ হাজার ৯৪৮-এ পৌঁছয় - যা সর্বকালের রেকর্ডকে হার মানিয়ে যায়। ২০২০ সালে, করোনা মহামারির কারণে লকডাউনের সময়ে ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো ধর্ষণের ঘটনা ৩০ হাজারের নিচে নেমে যায় ।
২০০৯ সালে, ভারতে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার ছিল ২৬.৯ শতাংশ। ২০১৩ সালে, এটি ২৭ শতাংশে পৌঁছয়। ২০০৯ থেকে ২০২১ এর মধ্যে দোষী সাব্যস্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ হয় ২০২০ সালে এবং ৩৯ শতাংশে এসে পৌঁছয় । ২০২১ সালে, এটি আবার ২৮.৬ শতাংশে এ নেমে এসেছে।
২০১৬ সালে, ভারতে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ১৬৫ টি ধর্ষণের মামলা বিচারাধিন ছিল , যার মধ্যে ৪ হাজার ৮৪৯টি গণধর্ষণের মামলা। মোট ধর্ষণের মধ্যে ৪ হাজার ৭৩৯ টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, যেখানে ১৩ হাজার ৮১৩টি মামলার অভিযুক্তরা মুক্তি পেয়েছে। বছর শেষে ১,৩৩,৩৭৩টি মামলা বিচারাধীন ছিল। ২০১৬ সালে ভারতে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার ছিল ২৫. ৫ শতাংশ , যেখানে বিচারাধীন সংখ্যার হার ছিল ৮৭.৭ শতাংশ।