উর্দুর বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। আন্দোলন দমনের জন্য খানসেনা ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ গুলি চালায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত লুটিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রাত ৮টায় বরকত মারা যান। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে পুলিশ বরকতের দেহ সমাধিস্থ করে। সেখানেই একুশের আরও ৪ শহিদ আব্দুস সালাম, রফিকুদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমান ও আব্দুল জাব্বার শায়িত আছেন।
advertisement
পর দিন ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিলের উপর ট্রাক চালিয়ে আরও ৩ জনকে পিষে মেরে ফেলা হয়। ওই ভাষা শহিদদের স্মরণে রেখে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুায়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। '১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি যে সব ভাষা সৈনিক শহিদ হন’ নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মোট ৮ জন ভাষা শহিদদের মধ্যে দুই বাঙালির জন্মভূমি হুগলি ও মুর্শিদাবাদ। হুগলিতে জন্ম ভাষা শহিদ শফিউর রহমানের আর মুর্শিদাবাদের সালার থানার বাবলা গ্রামে জন্ম আবুল বরকতের। ১৯২৭ সালের ১৩ জুন বাবলা গ্রামে জন্ম বরকতের। তাঁর ডাকনাম আবাই। ১৯৪৫ সালে সালারের তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি ভর্তি হন বহরমপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজে। সেখান থেকে আই এ পাশ করে ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে অধুনা বাংলাদেশ গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে চতুর্থ স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্মানিক- সহ বি এ পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ক্লাসে ভর্তি হন। পড়া শেষ করার আগেই ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আজও তার বাবলা গ্রামে পৈতৃক জন্ম ভিটেতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা হয়। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।