ঘটনার সূত্রপাত আট দিন আগে। বাড়িতে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সদ্যোজাত সন্তানের নাকে নথ বা নাকছাবি পড়ানো হচ্ছিল। সেই সময়ই শিশুটি যন্ত্রণায় কেঁদে ওঠে এবং সেই নথ কোনওভাবে সে গিলে ফেলে। গোটা পরিবার তখন হতভম্ব। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তাঁরা ব্যর্থ হন ৷ এরপর জঙ্গিপুরের কয়েকটি নার্সিংহোমেও নিয়ে যাওয়া হয় ওই শিশুকে। কিন্তু তারাও অপারগ বলে ফিরিয়ে দেয়। মাঝে বাড়িতেও বহু চেষ্টা করা হয় নথ বার করার। কিন্তু সমস্ত চেষ্টাই বিফলে যায়।
advertisement
যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে ২৮ দিনের সদ্যোজাত। শেষ অবধি স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা শিশুকে নিয়ে এসএসকেএম-এ পৌঁছন ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে নিওনেটাল ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করানো হয়।
দ্রুত তার প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং এক্সরে করে দেখা যায় নথ আটকে আছে শ্বাসনালীর এক দুরূহ কোণে। এরপর এন্ডোস্কোপি করে জটিল ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসকরা এই নথ বার করেন। তাঁদের মতে, প্রায় দেড় সেন্টিমিটার এরও বেশি লম্বা এই নথটি সাত দিন ধরে গলায় আটকে থাকায় প্রাণসংশয় হয়েছিল এই সদ্যোজাতের। শিশুটি এখন বিপদমুক্ত। তবুও তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এসএসকেএম হাসপাতালে নিওনেটাল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপঙ্কর রায়, সুমন দাস, শুভঙ্কর চক্রবর্তী এবং অ্যানেস্থেটিস্ট অমৃতা রায় এই অস্ত্রোপচারের টিমে ছিলেন। চিকিৎসক দীপঙ্কর রায় বলেন, "যে অবস্থায় শিশুটিকে আনা হয়েছিল, তা যথেষ্টই ঝুঁকিপূ্ণ ছিল। যে জায়গায় নথ আটকে ছিল, সেখান থেকে বার করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া ছিল। তবে আমাদের তো চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। বিশেষ করে সাতদিন দেরি হওয়ায় জীবন নিয়ে সংশয় ছিল। সেখান থেকে এন্ডোস্কোপি করে আমরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নথ বার করতে সক্ষম হয়েছি। শিশুদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের ভাল লাগে।"
অন্যদিকে নতুন জন্ম পাওয়া এই শিশুর মা খাদিজা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। এই চিকিৎসকরা যেভাবে আমার শিশুদের বাঁচিয়ে তুললেন, তাতে আমি তাঁদের কাছে চিরঋণী।"