আরও পড়ুন-ময়দান ছেড়ে যাবেন না, ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করতে নেমেছে: অভিষেক
উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক (MoTA)-এর তরফে জানানো হয়েছে, তফসিলি উপজাতি গোষ্ঠীতে জন্মানো শিশুদের ৮৬ জনের মধ্যে ১ জন এই এসসিডি-তে আক্রান্ত। যেহেতু দিন দিন এই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তার জন্য উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় একটি সিকল সেল ডিজিজ সাপোর্ট কর্নার (Sickle Cell Disease Support Corner) গড়ে তুলেছে উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক। এটার মূল উদ্দেশ্য হল, রোগী এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবার মধ্যে একটা যোগসূত্র গড়ে তোলা। আর এসসিডি রোগীর চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্যও কিছু পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization)। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল– সদ্যোজাত শিশুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত চিকিৎসা, বিবাহ সংক্রান্ত কাউন্সেলিং এবং জন্মের পূর্বেই রোগ নির্ণয়-সহ সিকল সেল রোগীদের নানা ধরনের কাউন্সেলিং।
advertisement
কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতাল (Peerless Hospital)-এর থ্যালাসেমিওলজিস্ট (Thalassemiologist) ডা. প্রশান্ত চৌধুরী (Dr. Prosanto Chowdhury) বলেন, "এসসিডি রোগীদের বার বার ব্যথা-বেদনার পুনরাবৃত্তির ফলে তাঁরা কার্যকারিতা হারাতে থাকেন। যার ফলে রোজকার কাজেও তার প্রভাব পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে এই সব উপসর্গ তুচ্ছ বা নগণ্য মনে হলেও তা কিন্তু যথেষ্ট গুরুতর এবং উদ্বেগের বিষয়। আর সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এর জন্য প্রয়োজন ভ্যাকসিন এবং হাইড্রক্সিউরিয়া (Hydroxyurea)। এসসিডি-র সতর্কতামূলক লক্ষণ সম্পর্কে রোগীদের সাবধান হতে হবে। আর সতর্কতামূলক লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হল- বিছানা ভিজিয়ে ফেলা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। আর এই ধরনের উপসর্গ হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। আবার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর নিরিখেও এসসিডি-র জন্য রোগনির্ণয়, চিকিৎসা এবং এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে চিকিৎসক-সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের ওয়াকিবহাল করতে হবে। এর পাশাপাশি সমস্ত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতে হিমোগ্লোবিনোপ্যাথি এবং শিশু জন্মের পূর্ববর্তী রোগ নির্ণয়-সহ সমস্ত ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে।”
আরও পড়ুন-ভোট নেই, তাই সেনাকে অপমান! অগ্নিপথ নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক, কৈলাশকে বহিষ্কারের দাবি
ভাসো-অক্লিউসিভ ক্রাইসিস (Vaso-Occlusive Crisis) বা ভিওসি (VOC) হচ্ছে সিকল সেল রোগের অন্যতম সাধারণ জটিলতা। কিন্তু এই জটিলতা কখন তৈরি হয়? আসলে অনেক সময় শরীরের কোনও নির্দিষ্ট অংশের রক্তনালী কাস্তে আকৃতির লোহিত কণিকা (sickled red blood cells) দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর তখনই এই ভিওসি দেখা দেয়। কখনও কখনও রোগীদের মধ্যে অ্যানিমিয়া, প্লীহার কার্যকারিতা নষ্ট, নিউমোকক্কাল সেপসিসের মতো গৌণ সংক্রমণ ইত্যাদির মতো জটিলতা দেখা দেয়। এখানেই শেষ নয়, অ্যানিমিয়া আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যেও এসসিডি-র গভীর প্রভাব পড়ে। আর এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে রোগীদের হাইড্রক্সিউরিয়া দেওয়া হয়ে থাকে। সংক্রমণের মোকাবিলা করতে প্রেসক্রাইব করা অ্যান্টিবায়োটিক-সহ অন্যান্য থেরাপির প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে রোগীর দেহে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়াতে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ইনস্টিটিউট অফ হেমাটোলজি এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন (Institute of Hematology and Transfusion Medicine)-এর অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের (Dr. Siddhartha Sankar Ray) বক্তব্য, “আগে পশ্চিমবঙ্গে এসসিডি সম্পর্কিত তথ্য একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। কিন্তু এখন এই সংক্রান্ত তথ্য হাতে এসেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ২৭টি থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Thalassemia Control Units) গড়েছে সরকার। যেখানে এই রোগীদের জন্য ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই কেন্দ্রগুলিতে কেবল রোগের তীব্রতা বাড়লেই রোগী আসেন। শুধু তা-ই নয়, খরচ বেশ বেশি। তাই আর্থিক সহায়তার জন্য রাজ্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং দিঘার মতো জায়গাগুলিতে এই রোগের প্রকোপ সবথেকে বেশি। তবে এই রোগের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার কিন্তু এই রাজ্যে সেরকম নেই বললেই চলে। তাই স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সকলকে এই রোগের চিকিৎসা বিকল্প এবং রোগের সাধারণ উপসর্গের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব সচেতন করতে হবে।”
এসসিডি নিয়ন্ত্রণে একটি সর্বাঙ্গীন চিকিৎসার মডেলের প্রয়োজন রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ সিকল সেল অর্গানাইজেশন (National Alliance of Sickle Cell Organizations) বা ন্যাসকো-র (NASCO) সেক্রেটারি গৌতম ডোংরে (Gautam Dongre) বলেন, “এসসিডি-র ক্ষেত্রে যে চিকিৎসা মডেল রয়েছে, তা আরও এক বার পর্যালোচনা করে দেখা উচিত আমাদের। এই ধরনের রোগীদের নিয়ে কাজ করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার থেকে বলতে পারি যে, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। আর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের জীবনের মানও উন্নত হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, সময়মতো সঠিক চিকিৎসাই এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি জরুরি। আর এর জন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া যায়। আর সেই সব জায়গায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কেন্দ্রও গড়ে তুলতে হবে। যদিও কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে ইতিমধ্যেই সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক। তবে এই রোগ সনাক্তকরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের দক্ষ করে তোলার বিষয়েও জোর দিতে হবে।”
এসসিডি নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সালে জাতীয় স্তরের নীতি একটি খসড়া তৈরি করেছিল ভারত। ওই খসড়ায় রয়েছে হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের নির্দেশিকা। তার পাশাপাশি রয়েছে সিকল সেল ডিজিজ এবং থ্যালাসেমিয়ার বিষয়েও। তবে এখনও পর্যন্ত এই নির্দেশিকার বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার এখনও এটার উপর কাজ করছে। জাতীয় স্তরে এটা লাগু হলে রাজ্য স্তরেও তা গ্রহণ করতে হবে।