অ্যাজমা কী?
যখন কোনও মানুষের শ্বাসনালীতে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন হয়, তখন তা ফুলে উঠে শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত মিউকাসও উৎপন্ন হতে থাকে। যার জেরে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। যদিও বিষয়টাকে অনেকেই লঘু করে দেখেন ঠিকই। কিন্তু এই সমস্যাই আমাদের রোজকার কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকী কিছু ক্ষেত্রে তো তা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
advertisement
অ্যাজমার ট্রিগারগুলি কী কী?
এই সমস্যার জেরে শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা, কাশি এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় সাঁ সাঁ করে আওয়াজ হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। যা হামেশাই প্রকট হয়ে উঠতে পারে। আর এই সমস্যা ইনহেলারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমনটাই জানাচ্ছেন দিল্লির সিকে বিড়লা হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট ডা. বিকাশ মিত্তল। তিনি বলেন যে, “অ্যাজমা বা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের প্রথম পদক্ষেপ হল ট্রিগারগুলিকে শনাক্ত করা। আর তা শনাক্ত করে ট্রিগারের সংস্পর্শে আসা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এর জন্য সম্ভাব্য ট্রিগার এবং অ্যাজমার উপসর্গগুলি লিখে রাখতে হবে। এরপর একবার ট্রিগার শনাক্ত করা গেলে তার সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ঘর ঝাড়পোছ করার সময় ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে আসা এড়াতে হবে। থআই ঘর সাফাইয়ের জন্য মপ অথবা ওয়েট ওয়াইপ ব্যবহার করা আবশ্যক।”
ডা. মিত্তল আরও বলেন, ট্রিগারগুলি পুরোপুরি এড়ানো না গেলেও এর সংস্পর্শে আসার ক্ষেত্রে লাগাম টানা যেতে পারে। যার জন্য কিছু বিশেষ উপায় অবলম্বন করতে হবে। যেমন – পার্ক এবং গাছগাছালি বেশি রয়েছে, এমন স্থানে পোলেনের পরিমাণও বেশি থাকে। তাই সেই সব স্থানে যেতে হলে একটি এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ধুলো-ঝড় কিংবা ধুলোময় আবহাওয়ার মধ্যে বেরোনো একেবারেই উচিত নয়।
অ্যাজমা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে?
অ্যাজমা অ্যাটাক বা অ্যাজমার আক্রমণ এড়ানোর জন্য অনিবার্য ট্রিগারের সংস্পর্শে আসার আগে একটি অতিরিক্ত শর্ট-অ্যাক্টিং ব্রঙ্কোডিলেটর অথবা অ্যান্টিহিস্টামিনের দুটি পাফ নিতে হবে। যদিও ডা. মিত্তল সতর্ক করে এ-ও জানিয়েছেন যে, প্রথম দুটি বিকল্প কার্যকর না হলে তবেই এই উপায় অবলম্বন করতে হবে। আর এর জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যাতে নির্ধারিত ওষুধের মাত্রা যেন বেশি না হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎকের বক্তব্য, অনেকেই এক্সারসাইজ করেন। কিন্তু এক্সারসাইজের জন্য হাঁপানির কারণে বাইরে যেতে পারেন না। ফলে আর এক্সারসাইজ করাও হয়ে ওঠে না। সেক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যেই করতে হবে। যেখানে অ্যাজমার কোনও ট্রিগার থাকবে না। তবে এক্সারসাইজ কিন্তু বন্ধ করা চলবে না।
ডা. মিত্তল আরও বলেন যে, ধীরে ধীরে নিজেকে সক্রিয় রাখার মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ ভাল কার্ডিওভাস্কুলার ফিটনেস একটি নির্দিষ্ট স্তরের এক্সারসাইজের জন্য প্রয়োজনীয় মিনিট ভেন্টিলেশন হ্রাস করে। তিনি আরও বলেন যে, ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া অথবা পোলেনের মরশুমে ঝড় শুরু হওয়ার সময় এক্সারসাইজ করার আগে শর্ট অ্যাক্টিং বিটা-অ্যাগোনিস্ট (অ্যালবিউটেরলের মতো এসএবিএ) ব্যবহার করতে হবে। এতে অ্যাজমার উপসর্গগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আর সব শেষে, কোনও রকম ভাইরাল ইনফেকশন বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ এড়াতে একটি ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া আবশ্যক। সেই সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।