বীরভূমের ইলামবাজারের বনভিলার বাসিন্দা পুষ্পরানির দিন শুরু হয় কাকভোরে ৷ দিনের সূত্রপাতে গোয়াল থেকে গোবর সংগ্রহ করে বালতিতে জলের সঙ্গে মেশান ৷ এ সব দেখতে নেটিজেনদের শহুরে চোখ অনভ্যস্ত ৷ সে কথা জানেন ঠাকুমা ৷ তাই কাজের প্রথমেই বলে দিলেন, ‘আপনারা ঘেন্না করবেন না কেউ গোবর দেখে!’
এর পর নিপুণ হাতে উঠোনের সর্বত্র দিলেন গোবরের ছড়া ৷ রীতি মেনে ভিটের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে গোবরজল দিয়ে মাটির উঠোনে আঁকলেন বৃত্ত ৷ স্থানীয় কথ্য ভাষায় এর নাম ‘মারুলি’৷ জানালেন বৃদ্ধা ৷ গোবরজলের ছড়ার পর ঝাঁট দিয়ে ঘরের উঠোন নিকিয়ে ঝকঝকে তকতকে করে এ বার ঘরে যাঁরা বসত করেন, তাঁদের পালা ৷ পরিবারের সকলের দিকে ঠাকুমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেতেই হবে ঠাকুমার বিশেষ ‘রেসিপি’ ৷
advertisement
আরও পড়ুন : ডুবো তেল থেকে ডুব চিনির রসে, জন্মাষ্টমীতে ‘ভিল ফুড’-এর ঠাকুমার রেসিপি তালের মালপোয়া
কী সেই বিশেষ খাবার? সে হল সম্পূর্ণ বনজ এক মিশ্রণ ৷ নিজের হাতে মিশিয়ে ঠাকুমা বেটে নিলেন শিউলি, কালমেঘ, বাসক, গ্যাঁদাল এবং নিমগাছের পাতা ৷ সেই মিশ্রণ দিলেন নাতি ও পুত্রবধূকে ৷ খেতেই হবে সেই তিতকুটে মিশ্রণ, এটাই ঠাকুমার নিদান ! প্রকৃতির দেওয়া উপাদানেই অসুখ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন এই বৃদ্ধা ৷ তাঁর পরিবারেরও বহমান সেই নিয়মই ৷
ঠাকুমার তৈরি আটপৌরে ও সাবেক বাঙালি রেসিপি নিয়মিত ইউটিউবে শেয়ার করেন তাঁর নাতি ৷ ইউটিউবে বাজিমাত করেছে ঠাকুমার রান্না ৷ হলই বা ভার্চুয়াল, ঠাকুমার হাতের ইলিশ ভাপা থেকে চিতলের মুইঠ্যা-নেটিজেনদের জিভে জল এনে দিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : ক্ষেতের তাজা পটলে পুর ভরে সু্স্বাদু নিরামিষ দোরমা ঠাকুমার রান্নাঘরে, বিশ্ব নারকেল দিবসে দেখে নিন রেসিপি
সকালে এত কাজের মধ্যেও ঠাকুমার মনে পড়ে গেল বিশেষ জিনিসের কথা ৷ সেটা নেটিজেনদের না দেখালে চলবে কী করে ! ঠাকুমা চললেন পত্রবিহীন এক শুষ্ক গাছের কাছে ৷ জানালেন, সেটা তাঁর চন্দনগাছ ৷ পুঁতেছেন সদ্য ৷ কাছেই হয়ে আছে একগুচ্ছ কাশফুল ৷ তাদের গায়ে সকালের শিশির ৷ ঠাকুমা বললেন, যত দিন এগোবে, তত তীব্র হবে কাশের শুভ্রতা ৷
ভোরবেলা এই একগুচ্ছ কাজের পর চা পান করে তবে দিন শুরু হয় ঠাকুমা পুষ্পরানির ৷ তার পর চলে দিনভর আরও কাজ ৷ তার মাঝেই চারদিক খোলা মাটির রান্নাঘরে রেসিপি শ্যুটিং ৷ অনেকটা সময় জুড়ে থাকে নাতির সদ্যোজাত সন্তানও ৷ কয়েক প্রজন্মকে নিয়ে পরিবার তথা নেটমাধ্যম আলো করে থাকা পুষ্পরানির ভাল থাকার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে তাঁর অবিরাম কাজ করে যাওয়ার মাঝেই ৷