খুদে স্কুলপড়ুয়ারাও তাদের বৃদ্ধা সহপাঠিনীকে দেখতে এখন অভ্যস্ত। তাদের সঙ্গে বসেই দন্তহীন মুখে পড়া মুখস্থ করা, পড়া দেওয়া, লেখার কাজ পাল্লা দিয়ে করেছেন সলিমা। গত ৬ মাস ধরে পড়াশোনার পর সলিমা এখন পড়তে ও লিখতে পারেন। নাম সই করতে পারেন। নির্ভুল হিসেবে গুনতে পারেন টাকাও। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত তিনি গুনছেন, সেই ভিডিও এখন ইন্টারনেটে ভাইরাল।
advertisement
প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা ডক্টর প্রতিভা শর্মা বলেছেন, ‘‘সলিমা প্রায় ৮ মাস আগে আমাদের কাছে আসেন। অনুরোধ করেন তাঁকে যেন ক্লাস করতে দেওয়া হয়। এত বৃদ্ধাকে লেখাপড়া করানো কঠিন কাজ। তাই আমরা প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। তবে জীবনের উপান্তে পড়ার প্রতি তাঁর আগ্রহ অনুপ্রাণিত করেছে শিক্ষিকাদেরও। তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার মতো হৃদয় আমাদের ছিল না।’’
গ্রামেও দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন সলিমা। তাঁর দেখানো পথে পা রেখে আরও ২৫ জন মহিলা স্কুলে ভর্তি করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সলিমার দুই পুত্রবধূও। স্কুলে তাঁদের জন্য আলাদা সেশন তৈরি করা হয়েছে।
সলিমার নাতবৌ ফিরদৌস তাঁকে হাত ধরে রোজ স্কুলে নিয়ে যান। আবার ছুটির পর তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। ফিরদৌসের কথায়, ‘‘এই বয়সে এরকম নিষ্ঠা সত্যি অনুপ্রেরণা দেয়। উনি দুর্বল। চলাফেরার সময় তাঁর সাহায্য দরকার। তবে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে যান। তাঁকে এভাবে পড়াশোনা করতে দেখে আমরাও আশায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠি।’’
সলিমা নিজে বলছেন, ‘‘আমার প্রথম দিনটার কথা মনে আছে যে দিন প্রধানশিক্ষিকা আমাকে একটি বই দিয়েছিলেন। আমার হাত কাঁপছিল। কী করে একটা কলম ধরতে হয়, সেটাও আমি জানতাম না। ভয় পেলেও মনে ছিল বাঁধনহারা আনন্দ। আমার বিয়ে হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। সে সময় আমাদের গ্রামে কোনও স্কুল ছিল না। তার পর সন্তান হল, সংসারে জীবন এগোতে থাকল তার নিজের মতো করেই। কিন্তু একবারেই না হওয়ার থেকে দেরিতে হলেও ভাল জিনিস হওয়া ভাল।