অনেক বাড়িতেই শিশুরা কাঁদলে বা রেগে গেলে তাদের শান্ত করার হাতিয়ার হিসাবে অভিভাবকরা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন গ্যাজেটস ধরিয়ে দেয়। অদ্ভুতভাবে তারা শান্তও হয়ে যায়। আজকাল ৩-৪ বছরের বাচ্চারা অনায়াসে খেলার ছলে মোবাইল ফোন আনলক করা, অ্যাপস চালানো এবং অনলাইনে গেম খেলতে পারে। তাদের কাছে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করার চাইতে বাড়িতে বসে এসব নিয়ে মেতে থাকা অনেক বেশি আনন্দের। তাই খুব অল্প বয়সেই অনেক বাচ্চাদের চোখে চশমাও লেগে যায়। শিশুরা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ইলেকট্রনিক গেমস এবং অন্যান্য হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস ছাড়া একেবারে চলতে পারেনা। শুধু শিশুরাই না , বয়ষ্কদের জীবনেও গ্যাজেটস এখন খুব বেশি জনপ্রিয়।
advertisement
স্ক্রিন টাইম কম করুন :
বাচ্চাকে বেশি গ্যাজেটস ব্যবহার করতে দেবেন না। কখনো ভাববেন না যে বাচ্চা বেশি বিরক্ত করলে কিংবা কাঁদলে তার হাতে গ্যাজেটস তুলে দেওয়াটাই একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে এইটুকু বয়সে শিশুর অতিমাত্রায় গ্যাজেটসের ব্যবহার ভবিষ্যতের জন্য তাদের বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং গুরুতর আচরণগত সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমনকি তাদের ওপর অনেক রকমের বিরূপ প্রভাবও ফেলতে পারে। তাই সময় হাতে সাবধান হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। চেষ্টা করুন আপনার বাচ্চার স্ক্রিনটিমে সংক্ষিপ্ত করতে কিংবা একটা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী সীমাবদ্ধ করে দিতে। তাদের জিদের কাছে হার না মেনে তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সজাগ হন। অন্য কোন কাজ, খেলাধুলা ,পড়াশুনা এবং হবির মধ্যে তাদের নিযুক্ত রাখতে চেষ্টা করুন।
মিশিগান ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ চিলড্রেন'স হসপিটালের ডাক্তার জেনি রাডেস্কি, ডেভেলপমেন্ট এন্ড বিহেভিওরাল পিডিয়াট্রিসিয়ান, এমডি বলেছেন, "একটি ছোট শিশুকে স্থির করার জন্য মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করাটা একটি অস্থায়ী হাতিয়ারের মতো মনে হতে পারে তবে এর অনেক দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া আছে , যদি এটিকে নিয়মিত শিশুদের শান্ত রাখার জন্য এই কৌশল ব্যবহার করা হয় ।"
- ডিজিটাল গ্যাজেটসের নেগিটিভ প্রভাব :
- আজকাল বাচ্চাদের মধ্যে অসম্ভব জিদ ,ক্ষনে ক্ষনে মুড্ সুইংস ,রাগ, দুঃখ ,হতাশা এবং হায়পারএক্টিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- বাচ্চাদের অত্যাধিক মোবাইল, স্মার্টফোন , ট্যাবলয়েড , ইন্টারনেট দেখার প্রবণতা তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে।
- শিশুদের মধ্যে অতিমাত্রায় টিভি , মোবাইল দেখা, অনলাইন গেম খেলা অসময়ে তাদের মধ্যে ওবেসিটির সমস্যা ডেকে আনতে পারে। খেলাধুলা এবং শরীরচর্চার অভাব তাদের ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- গ্যাজেটসের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানোর জন্য শিশুদের মধ্যে আজকাল বিষন্নতা ডেকে আনে।
বাচ্চাদের শান্ত করতে তাদের হাতে স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের মতো ডিভাইসগুলি ধরিয়ে দেওয়া ছোট এবং সহজ উপায় মনে হলেও এর পরিণতি ভালো হয়না। তাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা বা আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অভিভাবক হিসাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তাদের স্ক্রীন টাইম কমানোর চেষ্টা করুন -
স্ক্রিনটিমে নির্ধারণ করুন এবং টিভি, ইন্টারনেট দেখার সময় বেঁধে দিন।
ঘুমানোর আগে তাদের গ্যাজেটস ব্যবহার করতে দেবেন না।
- আউটডোর গেম, নতুন কোন হবি , নাচ গানের মতো অন্যান্য এক্টিভিটিজের সঙ্গে তাদের যুক্ত রাখুন।
- শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে নজর দিন।
- ছোট বেবিদের খেলনা বা বই দিয়ে মন ভোলান ,কিন্তু গ্যাজেটস থেকে দূরে রাখুন।
- বাচ্চাদের নিজে খেতে দিন, খাবারের সময় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করবেন না।
- বাচ্চাদের নিজের সময় দিন , ফ্যামিলি টাইম কাটাতে কোনরকম গ্যাজেটস ব্যবহার করা থেকে নিজেকে এবং আপনার সন্তানকে দূরে রাখুন।
সন্তানদের সঠিক পথে ফেরাতে অভিভাবকের ভূমিকা অনেক বড় ,তাই আপনি চেষ্টা করুন কিভাবে তাদের গ্যাজেটস থেকে দূরে রেখে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।