এই দোকানের শুরু ১৯৪৯ সালে। প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় মণীন্দ্রনাথ ঘোষ নিজ হাতে তৈরি করেছিলেন এই রসভরা মিষ্টি। তখন উত্তরবঙ্গ- জুড়ে এমন মিষ্টির প্রচলন ছিল না। তিনি বলেছিলেন, “মিষ্টি শুধু খাওয়ার জন্য নয়, এটা একটা সংস্কৃতি।” সেই বিশ্বাস আজও টিকে আছে। আজ তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিরা একসঙ্গে চালাচ্ছেন দোকান, হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন ঐতিহ্য।
advertisement
লালমোহন, যার বাইরের ত্বকটা হালকা শক্ত, ভিতরে ঝরঝরে রস। ভাঙলে রস গড়িয়ে পড়ে, মুখে দিলেই গলে যায়। এর স্বাদে রয়েছে এমন এক জাদু, যা শহরের নামী মিষ্টির দোকানেও মেলে না। বিশেষত এই দোকানের রসের স্বাদে রয়েছে এক ধরনের ঘরোয়া আবেগ, জন্মদিন হোক বা পূজা, শোক বা সুখ, সব মুহূর্তেই যেন একটুখানি লালমোহন চাই।
এই লালমোহনের স্বাদ নিতে একসময় ছুটে এসেছেন কিশোরকুমার, মান্না দে, অমিত কুমার, বাপি লাহিড়ী, বাবুল সুপ্রিয়–সহ একাধিক জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। শুধু তাই নয়, টলিউড থেকে বলিউডের একঝাঁক তারকা, প্রসেনজিৎ, রচনা, ঋতুপর্ণারাও এই দোকানে এসেছেন মিষ্টির মোহে। দোকানের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে বহু তারকার স্বাক্ষর ও স্মৃতি।
দোকান মালিকের পরিবারের বৌমা অনিমা ঘোষ বলেন, “আমরা তো আর পাঁচটা দোকানের মতো শুধু পেশাদার ভাবে চালাই না। এখানে মিষ্টি তৈরি হয় যত্ন নিয়ে। অনেকেই বলেন, আজও মণীন্দ্রদার হাতের গন্ধ থাকে এই লালমোহনে।’’
প্রতিদিন তৈরি হয় গড়ে ১০০০-১৫০০ পিস লালমোহন। কেউ কেউ একসঙ্গে অনেক পিস নিলে মাটির হাঁড়িতে গরম লালমোহনও পান। বিশেষ দিনে যেমন বিজয়া দশমী, কালীপুজো বা বাংলা নববর্ষে, এই দোকানে ভিড় উপচে পড়ে। অনেকে একসঙ্গে ৫০-১০০ পিস পর্যন্ত অর্ডার দেন। কেউ কেউ নিয়ে যান কলকাতায়, কেউ পাঠান বিদেশে থাকা আত্মীয়দের জন্য। স্থানীয় মানুষ তো বটেই, এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে দেশের নানা প্রান্ত থেকেও মানুষ এসে খেয়ে যান এই মিষ্টি। অনেকেই এখানে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন মিষ্টির সঙ্গে, শেয়ার করেন ইনস্টাগ্রামে, ফেসবুকে।
আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই দোকান যেন আরও বেশি পরিচিত। মিষ্টির সঙ্গে দোকানদারের সেলফিও তোলা হচ্ছে নিয়মিত। সিরিয়ালের তারকা হোক বা সাধারণ মানুষ, ফুলবাড়ির এই দোকান হয়ে উঠেছে সকলের প্রিয় এক স্বাদ-গন্তব্য।