অটিজম কী?
গ্রেটার নয়ডার শারদা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কুণাল কুমারের মতে, 'অটিজম' এমন একটি অবস্থা বা ডিজঅর্ডার, যার কারণে শিশু সমাজের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে পারে না। এমনকী নিজের মনের অনুভূতিও তারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে অক্ষম হয়। চিকিৎসকরা সাধারণত শিশুদের আচরণ এবং বিকাশ দেখেই এই সমস্যার শনাক্ত করে থাকেন। আসলে এই অবস্থা নির্ণয় করার জন্য কোনও মেডিকেল পরীক্ষা হয় না। সাধারণত ২ বছর বয়স পার হলেই শিশুদের মধ্যে এই অবস্থার লক্ষণগুলি ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। আর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই লক্ষণগুলি আরও স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠতে শুরু করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অটিজমের সমস্যা ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
advertisement
আরও পড়ুন: ক্যানসার নিয়ে দুশ্চিন্তা! প্রতিদিনের মেনুতে রাখুন এই ৫ খাবার, ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না মারণরোগ!
অটিজমের উপসর্গগুলি কী কী?
নিচে অটিজমের কিছু সাধারণ উপসর্গ বা লক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করা হল। শিশুদের মধ্যে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সচেতন হতে হবে এবং অবহেলা না-করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারা
- শব্দ ব্যবহার না করেই নিজের মনে বিড়বিড় করা
- একা থাকা এবং অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করতে না চাওয়া
অটিজমের ঝুঁকি কীভাবে এড়ানো যায়?
ড. কুণাল কুমারের মতে, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর অটিজমের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো যায়। শুধু তা-ই নয়, গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। আর শিশুর জন্মের পরে তাকে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় টিকাও দিতে হবে।
অটিজমের চিকিৎসা কী?
ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতে, অটিজমের কোনও ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা নেই। আসলে এই সমস্যার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করাই সম্ভব। আর তার জন্য ওষুধ খাওয়ারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। যদিও সব ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয় না। সেই সব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র থেরাপি এবং বিভিন্ন স্কিল শেখার মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত মানুষজন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এর জন্য কোনও ভালো শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম এবং আচরণগত থেরাপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। অটিজমের ক্ষেত্রে সব কেস এক রকম হয় না, অর্থাৎ একটি কেস অন্যটির থেকে সব সময়ই আলাদা। তাই শুধুমাত্র উপসর্গ বিচার করেই চিকিৎসা করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: শুধু পিঠে-পুলি নয়, উজ্জ্বল-তরতাজা ত্বক পেতে চালের গুঁড়ো ব্যবহার করুন এ ভাবে...
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের কী কী করণীয়?
ডা. কুণাল কুমারের মতে, এই সব ক্ষেত্রে শিশুদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত নিজেদের সন্তানের সঙ্গে আরও বেশি করে সময় কাটানো। সেই সঙ্গে মনোযোগ দিতে হবে সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পাওয়া অটিজমের লক্ষণগুলির উপরেও। যদি দেখা যায়, সন্তান স্বাভাবিক আচরণ করছে না, সে ক্ষেত্রে তার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। আর এমন লক্ষণ দেখা দিলে তা নিয়ে একেবারেই গাফিলতি কিংবা অবহেলা করা ঠিক নয়। সময় মতো অটিজম শনাক্ত করা গেলে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যেতে পারে। আর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বড় শব্দ অথবা বাক্যের পরিবর্তে ছোট-ছোট শব্দ অথবা বাক্য ব্যবহার করে কথা বলা উচিত। আক্রান্ত শিশুকে অন্য কোনও শিশু কিংবা অন্য কারওর সঙ্গে তুলনা করা চলবে না। তাকে নতুন-নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করাতে হবে। অটিজমে আক্রান্ত শিশু রাগারাগি করলে তাকে বকুনি দেওয়া একেবারেই উচিত নয়, বরং তাকে ভালোবেসে কথা বলেই সব কিছু বোঝানো উচিত।