শহরের গেটবাজার এলাকায় এক সরু গলিতে, নিজের বাড়ির সামনের অংশে ছোট্ট দোকানটি চালান নিমাই দাস ও তাঁর স্ত্রী তাপসী দাস। এই দোকান নতুন নয়, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তাঁরা এই একই জায়গায়, একইভাবে মানুষের পাতে রাখছেন গরম শিঙাড়া আর কচুরি। এক সময় এক টাকায় পাওয়া যেত এক পিস শিঙাড়া বা কচুরি। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তাঁদের দোকানে বদল এসেছে খুব সামান্যই, করোনা অতিমারির পরে শুধু এক টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে দুই টাকা।
advertisement
রোজ সন্ধ্যা নামলেই দোকানের সামনেটা যেন মিনি মেলায় রূপ নেয়। স্কুল থেকে ফেরা ছাত্রছাত্রী, বাজার ফেরত গৃহিণী, অফিস শেষে বাড়ি ফেরা মানুষ, সবার হাতে দেখা যায় ছোট্ট কাগজের ঠোঙা। ঠোঙার ভেতর গরম শিঙাড়া আর কচুরি — গেটবাজারের এই দুই টাকার সুখ!
তাপসী দাস হেসে বলেন, “দুই টাকায় খুব লাভ হয় না, সংসার চলে যায় কোনওমতে। কিন্তু যারা খেতে আসে, তাদের মুখের হাসি আর আশীর্বাদই আমাদের সবচেয়ে বড় পুঁজি।” প্রতিদিন প্রায় চার-পাঁচ হাজার পিস শিঙাড়া-কচুরি বিক্রি হয়, লাগে প্রায় ৪০-৫০ কেজি ময়দা। দোকান চালাতে আলাদা কারিগর নেই, পরিবারের সবাই মিলে বানান, ভাজেন আর গরম গরম তুলে দেন ক্রেতার হাতে।
আরও পড়ুন : এই ডাল পেটে গেলেই কুরে কুরে মানুষের ‘মাংস খায়’! ঝাঁঝরা হয়ে যায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ? জানুন
১৮ বছর বয়সী ধীরাজ কুমার বলেন, “আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম তখন এক টাকার শিঙাড়া খেতাম। এখন কলেজে পড়ি, শিঙাড়া দুই টাকা হয়েছে, কিন্তু স্বাদ একটুও বদলায়নি।” মূল্যবৃদ্ধির বাজারে দুই টাকায় কীই বা মেলে? এক বোতল জল নয়, এক কাপ চাও নয়, অথচ এখানে দুই টাকায় মেলে ভরসা। নিমাই দাস বলেন, “অনেকবার মনে হয়েছে দাম বাড়াই, কিন্তু এতগুলো মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে আর পারি না। যতটুকু বিক্রি হয়, সংসার চলে যায়, তার চেয়ে বেশি আর কী চাই!”
৪৫ বছরের এই যাত্রা প্রমাণ করে, ব্যবসা মানে শুধু লাভ নয়, মানুষকে নিয়ে বাঁচা। কোনও বড় সাইনবোর্ড নেই, চকচকে বিজ্ঞাপন নেই, আছে শুধু সাদামাটা হাসি, গরম শিঙাড়া আর মানুষের ভালবাসা। এখনও প্রতিদিন সন্ধ্যায় গেটবাজারের সেই সরু গলিতে ভিড় লেগেই থাকে, কেউ বলে “কাকু, দুটো দেবেন!” কেউ বলে “কাকিমা, দশটা ঠোঙায় দিন!” আর নিমাই দাস-তাপসী দাস দম্পতি চুপচাপ হাতে গরম শিঙাড়া ধরিয়ে দেন, ভিজে শহরটাকে আরেকটু উষ্ণ করে তোলেন।