১৯৯৯ সালে প্রথম তিনি স্কুলে যোগদান করেছিলেন। সেই থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছিল তাঁর চাকরির মেয়াদ। তবে আজও তিনি স্কুলে ছুটে আসেন শুধুমাত্র ভালবাসার টানে। স্কুলের প্রতিটা ক্লাসরুম, বাচ্চাদের কোলাহল, টিচার্স রুম, স্টাফ রুম-সব যেন তাঁকে বার বার ডেকে নিয়ে আসে এই স্কুলের মধ্যে। ২০২১ সালে অবসর হয়ে যাওয়ার পরে আজও তিনি প্রতিদিন স্কুলে আসেন নিয়মমাফিক। তবে অবসরের পর কখনওই আর তিনি স্কুল থেকে বেতন নেননি। বরং তিনি শ্রম দান করেন বিনা পারিশ্রমিকেই।
advertisement
অবসরপ্রাপ্ত ডি গ্রুপের কর্মী সঞ্জয় নন্দী বলেন, ‘‘আমি যখন এই স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম, তখন থেকেই স্কুলকে ভালবেসে আসছি । এখানকার স্কুলের ছাত্র থেকে শিক্ষক সকলেরই ব্যবহার অমায়িক। তাদের ভালবাসার টানে আজও পড়ে আছি এই স্কুলে। ১৯৯৯ সালে এই স্কুলে প্রথম যোগদান করি ।২৪ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের কথায় অবসর নেওয়ার পরও স্বেচ্ছায় এখনও কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন শরীর সুস্থ থাকব, ততদিন এভাবেই কাজ করে যাব। স্কুলে অবসরের পরও এ স্কুলে আসা নিয়ে অনেক কথা বললেও আমি কোনও গায়ে মাখি না। আমার পরিবারের তরফেও কোনও বাধা নেই। আমার যা পেনশন, সেই টাকাতেই আমার চলে যায়।অতিরিক্ত কোনও টাকার আমার প্রয়োজন নেই স্কুল থেকে।’’
আরও পড়ুন : ব্রেইলের পাশাপাশি সঙ্গী অডিও রেকর্ডার! প্রতিকূলতাকে হারিয়ে মাধ্যমিকে নজরকাড়া সাফল্য ২ দৃষ্টিহীন ছাত্রের
খলিসানী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শুভায়ন মিত্র বলেন, ‘‘এসএসসি প্যানেলের বাতিলের আগে থেকেই আমার স্কুলে গ্রুপ সি পদে কোনও কর্মী নেই। গ্রুপ ডি পদে একজনই মাত্র সরকারি কর্মী রয়েছেন। তাঁর শারীরিক সমস্যা বা পারিবারিক সমস্যা হলে আমি এবং আমার শিক্ষকরাই গ্রুপ ডি-র কাজ করি। আমরা খুবই ভাগ্যবান ২০২১ সালে যিনি অবসর নিয়েছিলেন, তার পর থেকে তিনি গত চার বছর ধরে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন আমাদের স্কুলে। তিনি স্কুলের প্রতি ভালবাসা থেকে স্বেচ্ছায় প্রতিদিন আসেন। তিনি বিনা পারিশ্রমিকে স্কুলের সমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন। কোনও কিছু দিতে চাইলেও নিতে চান না । তাঁর মতে তাঁর পেনশনের টাকাটাই যথেষ্ট। আমার কাছে এত বড় মনের মানুষ আমি খুব কম দেখেছি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের স্ট্রং রুমের কাগজপত্র ও অফিশিয়াল গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে সবকিছুই করে দেন নির্দ্বিধায়। সেই কারণেই তার কাছে আমরা খুব কৃতজ্ঞ। চার বছর ধরে তিনি এইভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন। তাই খলিসানি বিদ্যামন্দিরে সঞ্জয়দার বিকল্প বা জুড়ি নেই।