পরিবেশগত স্থায়িত্ব থেকে পুষ্টিকে আলাদা করা যায় না, তাই প্রতি বছর জাতীয় পুষ্টি মাস একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং উন্নত পুষ্টির মধ্যে সংযোগ তুলে ধরার জন্য, ভারতের প্রতিটি শিশু, মা এবং পরিবারের পুষ্টিকর খাবার তথা একটি সুস্থ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য পালিত হয়। “আমি মনে করি একসঙ্গে আমরা একটি অপুষ্টিমুক্ত ভারত অর্জন করতে পারি”, বলছেন তিনি।
advertisement
জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য ছিল একটি উন্নত জীবনের জন্য সঠিকভাবে খাওয়া যা স্বাস্থ্য গঠনে খাবারের গুরুত্ব তুলে ধরে। কিশোর-কিশোরীরা প্রায়শই ভাজা খাবার, প্যাকেটজাত ফাস্ট ফুড এবং চিনিযুক্ত পানীয় পছন্দ করে। সুবিধাজনক হলেও এই খাবারগুলিতে লবণ, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির পরিমাণ কম থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস রক্তাল্পতা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, এমনকি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতাও ডেকে আনে।
এই সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ এবং অন্য জায়গায় পুষ্টি সম্পর্কিত শিক্ষাদান কিশোর-কিশোরীদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি বুঝতে সাহায্য করতে পারে। সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল সাশ্রয়ী মূল্যের, পুষ্টিকর খাবারের জোগান। মরশুমি ফল, শাকসবজি, ডাল, গোটা শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য এবং বাদাম সমৃদ্ধ খাদ্য কেবল শারীরিক বৃদ্ধিরই সহায়ক নয়, বরং একাগ্রতা এবং শক্তিও বৃদ্ধি করে, যা শিক্ষাগত এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন : এই ঘরোয়া ‘সাদা’ জিনিস দিয়ে মাথায় ম্যাসাজেই ম্যাজিক! বর্ষায় দলা দলা চুল পড়া বন্ধ! পারফেক্ট টিপস!
ঠিক তেমনই অষ্টম জাতীয় পুষ্টি মাস ২০২৫-এর মূল প্রতিপাদ্যগুলি নিম্নরূপ:
১. স্থূলতা মোকাবিলা- চিনি এবং তেলের ব্যবহার হ্রাস: সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস প্রচারের মাধ্যমে অপুষ্টি এবং অতিরিক্ত পুষ্টি উভয়ই মোকাবিলা করা।
২. শৈশবকালীন যত্ন এবং শিক্ষা: ECE সেটিংস শিশু এবং তাদের পরিবারকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শেখানোর এবং মডেল করার কৌশলগুলিকে একীভূত করতে পারে। মূল কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে সুষম খাবার প্রদান, খাওয়ার সময় নিয়ে ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলা, পুষ্টিকর খাবার অন্বেষণকে উৎসাহিত করা, পুষ্টিকেন্দ্রিক কার্যক্রম প্রদান করা এবং আজীবন সুস্থতার জন্য একটি সুসঙ্গত, সুস্থ ভিত্তি তৈরির জন্য পরিবারের সঙ্গে সহযোগিতা করা।
৩. এক পেড় মা কে নাম: এটি একটি দেশব্যাপী প্রচারণা যা নাগরিককে তাঁদের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করে, মায়ের লালন-পালনের ভূমিকাকে সম্মান জানিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত জমি পুনরুদ্ধারে উৎসাহিত করে।
৪. শিশুকে খাওয়ানোর অনুশীলন (ICFP): শিশুদের খাওয়ানোর ক্রম এরকম- প্রথম ছয় মাস একচেটিয়াভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো, তার পরে নিরাপদ, পুষ্টিকরভাবে পর্যাপ্ত পরিপূরক খাবার প্রবর্তন করা এবং দুই বছর বা তার বেশি সময় পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখা। মূল অনুশীলনগুলির মধ্যে রয়েছে জন্মের প্রথম ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা, বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা, বোতলবন্দি চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়ানোর মতো ক্ষতিকারক অভ্যাস এড়ানো এবং খাবার তৈরির সময় ভাল স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা।
৬. পুরুষের ভূমিকা: পরিবারের স্বাস্থ্য এবং যত্নে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে পুরুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রচার করা।
অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের টিপস:
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বলতে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও শাকসবজি, গোটা শস্য এবং মটরশুঁটি, বাদাম, মাছ এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারের মতো চর্বিহীন প্রোটিন উৎস খাওয়া বুঝতে হবে। চিনিযুক্ত পানীয়ের চেয়ে জলকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া অন্তত কমাতে হবে এবং ন্যূনতম প্রসেসড খাবার বেছে নিতে হবে।
টেকসই অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য শুধু খাবার নয়, সুষম খাবার এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের উপর মনোযোগ দিতে হবে।
মূল স্বাস্থ্যকর পুষ্টির অভ্যাস গড়ে উঠবে যে ভাবে-
১. প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে
২. গোটা শস্য বেছে রাখতে হবে পাতে
৩. স্বাস্থ্যকর প্রোটিন উৎস নির্বাচন করতে হবে
৪. জল খাওয়া বাড়াতে হবে
৫. অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং লবণ কমিয়ে দিতে হবে
৬. অতিরিক্ত চিনি খাওয়া চলবে না
৭. মন দিয়ে খেতে হবে
একই সঙ্গে অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করার জন্য শরীরের ক্ষুধার সঙ্কেতগুলিতে মনোযোগ দিতে হবে।
ডায়েট প্ল্যানিং কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ:
ডায়েট প্ল্যানিং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।