প্রায় বেশ কয়েক মণ ওজনের এই রথ। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, লঙ্কা বেচে পিতল কিনে রথ বানিয়ে শুরু হয় রথযাত্রা উৎসব। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের তিয়রবেড়িয়ার এই ৮০ মণ পিতলের রথ। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রথযাত্রার ইতিহাস আপনাকে নিয়ে যাবে সুদূর ইতিহাসের দিনে।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় হাতে গোনা বেশ কয়েকটি রথ জনপ্রিয়। জেলায় তেমন পিতলের রথ দেখতে পাওয়া যায় না।তবে পরম্পরা মেনে আনুমানিক শতাধিক বছর প্রাচীন দাসপুরের তিয়রবেড়িয়ার সামন্ত পরিবারের রথ। আর এই রথযাত্রাকে ঘিরে বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান প্রতি বছর।বসে মেলা। গ্রামীণ এলাকায় এটি সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি।
advertisement
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এলাকার অর্থবান এক ব্যক্তি ত্রৈলোক্যনাথ সামন্ত কলকাতার বড়বাজারে ব্যবসা করতেন। এর পর ব্রিটিশ আমলে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের মালিদা গ্রামে জমিদারি কেনেন। সেখানে প্রায় হাজার বিঘার বেশি জমি ছিল তার অধীনে। একদিকে ব্যবসা এবং অন্যদিকে জমিদারিতে তাঁর প্রভাব বাড়তে থাকে।পাশেই এক ব্রাহ্মণ পরিবারের কূলদেবতা কষ্টিপাথরের কৃষ্ণমূর্তি মদন গোপাল জীউর আরাধনা শুরু করেন। পরে ত্রৈলোক্যনাথ সামন্ত কৃষ্ণর সঙ্গে অষ্টধাতুর রাধার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন, স্থাপন করেন রঘুনাথ জীউর শালগ্রাম শিলা। অর্থবান ত্রৈলোক্যনাথ শুরু করেন রথযাত্রা। লোকমুখে শোনা যায়, “লঙ্কা বেচে রথ কিনলেন ত্রৈলোক্যনাথ”। পুরানো দিনে কামান দেগে গড়াত রথের চাকা। তবে সেই নিয়ম আজ বন্ধ।
আরও পড়ুন : আঙিনায় জলফোয়ারা, কাঠের ঘানিতে পেষা সরষের তেলের গন্ধে আমোদিত ব্রিটিশ আমলের সাবেক বাড়ি
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রথ বানাতে জাহাজে করে সুদূর জার্মানি থেকে আনা হয়েছিল পিতল। সেই পিতলে তৈরি করা হয় এই রথ। জানা যায়, রথের পাঁচটি চূড়া। উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট।রয়েছে পিতলের দুটি ঘোড়া। প্রায় ছয় পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় এই রথের ধর্মীয় রীতি পালন করছে সামন্ত পরিবার। পুরীর উৎকলনীতি অনুযায়ী ন’ দিনে হয় উল্টোরথ। এছাড়াও জন্মাষ্টমীতে নানা আয়োজন করা হয়।তবে রথযাত্রা উপলক্ষে আশেপাশে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি গ্রামের মানুষ শামিল হয়। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন পিতলের রথ দেখতে। রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। আধুনিক সময় সভ্যতার উন্নতি হলেও তিয়রবেড়িয়ার প্রাচীন রথযাত্রার উন্মাদনায় কোনওরকম ভাটা ফেলতে পারেনি।