জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মদের দাবি, প্রায় তিনশো বছর আগে ওড়িশার বাসিন্দা অঙ্কুরচরণ নামে এক ব্যবসায়ী বাংলায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি পটাশপুরের ভৈরবদাঁড়ি গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। ব্যবসায় সফলতা লাভের পর ভগবানের কৃপা স্মরণে তিনি একটি মন্দির নির্মাণ করেন।
রাধাগোবিন্দ, রাধারানি, গোপালজীউ, লক্ষ্মী জনার্দন, রঘুনাথ ও বাসুদেব—এই ছয় বিগ্রহ বিরাজমান ওই মন্দিরে। সেই থেকেই শুরু হয় রাস উৎসবের প্রচলন, যা আজও একই নিয়মে পালন করে আসছেন গ্রামের মানুষ। প্রতি বছর কার্তিক মাসের রাস পূর্ণিমা থেকে শুরু হয় চারদিনব্যাপী এই উৎসব। এই উৎসব ঘিরে গোটা এলাকা পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসেন এই উৎসবে অংশ নিতে। রাস উৎসব কেন্দ্র করে বসে মেলা, যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতি সন্ধ্যায় থাকে বিনোদনের আয়োজন। এই রাস উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ নরনারায়ণ সেবা। প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত এই সেবায় অংশগ্রহণ করেন।
advertisement
আগে নদীপথে নৌকায় করে আনা হত নরনারায়ণ সেবার সামগ্রী, এখন রাস্তা পাকা হলেও সেই ঐতিহ্যের স্মৃতি আজও গ্রামবাসীর মুখে মুখে। একসময় মশাল জ্বালিয়ে সম্পন্ন হতো পুজো। বর্তমানে তার জায়গা নিয়েছে রঙিন বৈদ্যুতিন আলো। তবে উৎসবের ধর্মীয় আবেগে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি।
রাস উৎসবের দিনগুলোতে গোটা ভৈরবদাঁড়ি গ্রাম আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। মন্দির চত্বর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রতিটি পথ ঝলমল করে আলোয়। ভক্তদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
জমিদার বাড়ির ষষ্ঠ প্রজন্মের সদস্য স্বপনকুমার জানা বলেন, “এই রাস উৎসব আমাদের পূর্বপুরুষদের সৃষ্টি, আর আমরা শুধু সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তিন শতাব্দী ধরে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় এই উৎসব টিকে আছে। এখন সময় বদলেছে, কিন্তু ভক্তি আর নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। রাসের সময় গোটা গ্রাম এক হয়ে যায়—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় গর্ব। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন এই উৎসব চলবে আগের মতোই।”