বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে করোনভাইরাস সংক্রমণ কেন উদ্বেগজনক?
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO) জানিয়েছে, আগেই থেকে ডায়াবেটিস (Diabetes), উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), হৃদরোগ (Heart Disease), ফুসফুসের রোগ (Lung Disease), ক্যানসারের (Cancer) মতো জটিল অসুখে ভোগা মানুষ ও বয়স্কদের মধ্যে ঘন ঘন গুরুতর অসুস্থতা দেখা দেয় অন্যদের তুলনায়। একইভাবে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDS) আরও জানিয়েছে যে বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। খুব অসুস্থ হওয়ার অর্থ হল কোভিড-১৯ আক্রান্ত বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে বা ভেন্টিলেটরের (Ventilator) প্রয়োজন হতে পারে শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য। সংক্রমণ গুরুতর হলে তাদের মৃত্যুও হতে পারে। ৫০ বছর থেকে ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সের লোকজনের খুব বেশি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
advertisement
উচ্চতর তীব্রতার ঝুঁকি
অতিমারী শুরু হওয়ার পর থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরা গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে বেশিরভাগ লোক যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল তাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এই কারণেই এই বয়সের লোকেদের টিকা (Covid Vaccine) বা বুস্টার শট (Booster Shot) দেওয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বয়স্ক ব্যক্তিদের রক্তে টিকা দেওয়ার পরে অল্পবয়সী লোকদের তুলনায় অ্যান্টিবডির ঘনত্ব কম থাকে এবং তাদের অ্যান্টিবডির মাত্রা দ্রুত কমে যায়। এটি কেবল তাদের ভাইরাসের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
আরও পড়ুন: কিভের বহুতলেও আছড়ে পড়ল রুশ মিসাইল, ইউক্রেনের রাজধানী দখলে মরিয়া রাশিয়া
কোমর্বিডিটি সমস্যাগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে: ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক তার নির্দেশিকাতে বলেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শরীরের রিজার্ভ কমে যাওয়ার পাশাপাশি একাধিক কোমর্বিডিটির (Co-morbidities) কারণে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই কোমর্বিডিটিগুলি হল-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি রোগের মতো অসুস্থতা। এছাড়াও, বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগ গুরুতর হতে থাকে, যার ফলে মৃত্যুহার বেশি হয়। আগে থেকে শারীরিক অসুস্থতা থাকলে সব বয়সীদের মধ্য়েই কোভিড সংক্রমণ গুরুতর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই কারণেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কমর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের আরও সতর্ক থাকার কথা বলেছে।
আরও পড়ুন: ১০/১২ ঘণ্টা বসেই কাজ? শরীর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে অচিরেই, সতর্ক হতে আস্থা স্ট্রেচিংয়ে
কীভাবে প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে কোভিড প্রতিরোধ করা যায়?
বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায় হল সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভিড় এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোষ্ঠী সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিজ নিজ সুরক্ষায় জোর দিতে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২ সপ্তাহের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করে সেগুলি যত দ্রুত সম্ভব আনিয়ে নেওয়া উচিত। অতিরিক্তভাবে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রেকথ্রু সংক্রমণ বা টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমণ:
টিকা নেওয়ার পরেও অনেকে সংক্রমিত হচ্ছে। বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ তাদের দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা। যাই হোক, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কোভিড টিকা (COVID-19 Vaccine) আমাদের সুরক্ষা দেয়। এটি আমাদের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে না। টিকা আমাদের গুরুতর অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে, হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তবে, একটি নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা গাঁজা, অ্যালকোহল বা তামাক সেবন করে তাদের সম্পূর্ণভাবে টিকা দেওয়া হলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত (Breakthrough infections) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যখন সম্পূর্ণভাবে টিকা নেওয়া কোনও ব্যক্তি করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হয়, তখন সেটা অবাক করে। বিপুল জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়ার ফলে এরকম অনেক সংক্রমণের খবর সামনে আসছে। এটা দেখা গিয়েছে যে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা হয় উপসর্গহীন (Asymptomatic) থাকে অথবা হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা যায় তাদের মধ্যে। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, বয়স, অন্য রোগের (Comorbidities) উপর নির্ভর করে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। যাই হোক, এই সম্ভাবনা খুবই বিরল। বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে কোন টিকা নেওয়া হচ্ছে তার উপরেও। কারণ, প্রতিটি টিকার কার্যক্ষমতা সমান নয়। কোনও কোনও টিকা বেশি কার্যকরী এবং কোনও টিকা তুলনামূলক কম কার্যকরী।
নিরাপদ থাকার জন্য যা করা উচিত: সতর্ক থাকা, টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মানা (Social Distancing) ছাড়াও যে কোনও ধরণের তামাক থেকে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যখন আসক্তির কথা আসে, তখন অনেকেই বুঝতে পারে না যে তারা কী ক্ষতি করতে চলেছে বা করে ফেলেছে। তাই নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সুস্থ জীবনযাপনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সঠিক আহার গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধূমপান সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধূমপানের প্রবণতা থাকলে করোনা থেকে সেরে উঠতে সময় লাগে বা সমস্যায় পড়তে হয়।