সনাতনী মতে, সিঁদুরদানের পরই সম্পন্ন হয় বিয়ের অনুষ্ঠান৷ মাঙ্গলিক এই চিহ্ন কার্যত আনুষ্ঠানিক বিয়ের সিলমোহর৷ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর যে ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে, সেখানে শূন্যদৃষ্টি নিয়ে বসে ছিলেন হিমাংশী নারওয়াল৷ তাঁর চওড়া সিঁথিতে তখনও উজ্জ্বল সিঁদুর৷ হাতে ঝমঝম করছে ‘বিয়ের চূড়া’৷ সদ্য বিবাহিতার পাশে নিথর তাঁর স্বামী৷ বরফঢাকা হিমালয়, পাইনগাছের নিসর্গ ছাপিয়ে এই ছবিটাই হয়ে যায় পহেলগাঁওয়ের মুখ৷ তাঁর মতো আরও অনেক নববিবাহিতী ভারতীয় তরুণী ভূস্বর্গে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে জঙ্গিদের বুলেটে হারিয়েছেন তাঁদের স্বামী৷ ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছে তাঁদের জীবন৷ মহিলা এবং শিশুদের বাদ দিয়ে পহেলগাঁওয়ে নাম পরিচয় জানার পর নিশানা করে হত্যা করা হয় পুরুষদেরই৷ পরিবারে সকলের চোখের সামনেই লুটিয়ে পড়েন কারওর স্বামী, কারওর বাবা, কারওর স্নেহভাজন৷ তাঁদের মৃত্যুতে হারিয়ে যায় অনেক মহিলার সিঁথির সিঁদুর৷ তাই এই অভিযানের প্রত্যাঘাতের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ হয়ে এর অভিঘাতের সঙ্গে আমজনতার গাঁটছড়া আরও মজবুত করল৷
advertisement
ভারতে প্রচলিত সিঁদুর সাধারণত লাল রঙের৷ তবে বিহারে কমলা, এমনকি গোলাপি রঙের সিঁদুরও প্রচলিত৷ মাঙ্গলিক সিঁদুর সৌভাগ্য, উর্বরতা এবং শ্রী ও সমৃদ্ধির প্রতীক৷ অন্যদিকে গভীর ভালবাসা, নিবেদিত প্রাণ উৎসর্গের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয় সিঁদুরকে৷ ভারতে কবে থেকে সিঁদুরের প্রচলন শুরু, তার কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই৷ তবে সিন্ধু সভ্যাতার খননে প্রাপ্ত ৫ হাজার বছর আগের মহিলা মূর্তির মাথাতেও আছে সযত্নে কাটা সিঁথি৷ সিনেমা তো বটেই, ভারতীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় সিঁদুরের ভূমিকা ও মাহাত্ম্য গাঁথা হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে৷ মাঙ্গলিক চিহ্ন, সাজের অনুষঙ্গ ছাড়াও আয়ুর্বেদে সিঁদুরের উপকারিতা স্বীকার করা হয়েছে৷ সিঁদুররাঙা সীমন্তিনী এবং কপালে ত্রিনয়নসম বিন্দি যেন নারীশক্তির উন্মেষ৷ বুধবারের পর থেকে সিঁদুর প্রত্যাঘাতেরও প্রতীক৷ সিঁদুরে মেঘে অশনি দেখে ডরানোর বদলে শত্রুনিধনের পর আনন্দের সিঁদুরখেলা৷